Homeখেলাএকনজরে কাতার বিশ্বকাপের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো

একনজরে কাতার বিশ্বকাপের স্মরণীয় মুহূর্তগুলো

পর্দা নেমেছে কাতার বিশ্বকাপের। লুসাইল স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনলে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। অথচ গ্রুপপর্বের খেলায় এই আর্জেন্টিনাকেই হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল সৌদি আরব। রানার্সআপ ফ্রান্সও হেরেছে তিউনিসিয়ার কাছে। নানা অঘটন আর চমকে বিশ্বকাপের ২২তম আসরের চিত্রনাটয় ছিল রোমাঞ্চে ঠাসা।

বিশ্বকাপ আসরে স্বাগতিক কাতারের উল্লাস করার মতো তেমনই কিছুই ছিল না। সেনেগালের বিপক্ষে ম্যাচ হেরেও মোহাম্মদ মুনতারির প্রথম বিশ্বকাপে গোলটাই ছিল তাদের কাছে সান্ত্বনা। ডার্কহর্স তকমা নিয়ে আসা ডেনমার্কের একমাত্র প্রাপ্তি ছিল তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেলের অসাধারণ সেভ। যেটা ছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল সেভ।

উত্তর ও মধ্য আমেরিকার কোস্টারিকা; স্পেনের বিপক্ষে সাত গোল খেয়ে শুরু হয় কেইলর নাভাসদের বিশ্বকাপ। অথচ তারাই চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারানো এশিয়ার দেশ জাপানকে হারিয়ে চমক দেখায় । জেয়ান বার্গাসের অসাধারণ গোলে সুযোগ ছিল জার্মানিকে হারানোরও। তবে কাজ হয়নি। তবে বড় চমকটা দেখায় জাপান জার্মানির পর স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

ইরানের বড় প্রাপ্তি ওয়েলসকে হারানো। এ ম্যাচে চেসমি-রেজাইআনের দুর্দান্ত গোল দলকে জয় এনে দেয়। তবে এশিয়ার দেশ সৌদি আরব ছিল সবার চেয়ে আলাদা। তারা ঘটিয়েছে বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অঘটন। প্রথম ম্যাচেই ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় তারা। সেটাই ছিল তাদের বিশ্বকাপ আসরে অন্যতম সেরা মূহর্ত। সেই সৌদিকে আবার ২-১ গোল ব্যবধানে হারিয়েছিল মেক্সিকো।

আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ছিল ফ্রান্স। আর সে দলকেই গ্রুপ পর্বে ১-০ ব্যবধনে হারিয়েছিল তিউনিসিয়া। ভিনসেন্ট আবু বাকারের গোলে ব্রাজিলকে ১-০তে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা মুহূর্তটা তৈরি করেছিলো ক্যামেরুন।

উরুগুয়েকে বাদ করে বিশ্বকাপ আসরে নক আউট পর্বে জায়গায় করে নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় ২০০২ এর সেমিফাইনালিস্টরা।

১৯৯০ সালের পর বিশ্বকাপে গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিকই ছিল পর্তুগালের অন্যতম সেরা সাফল্য। শেষ ষোলোর এ ম্যাচে সুইসদের ৬-১ গোলে হারিয়েছিল পর্তুগাল। ২০১৮ বিশ্বকাপ এবং ইউরো সাফল্যের পর বিশ্বকাপেও চলছিল সাউথগেটের ইংল্যান্ডের ম্যাজিক। কিন্তু কোয়ার্টারে থামতে হয় থ্রি লায়নদের। ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যারি কেইনের পেনাল্টি মিসটাকেই তাই তাদের বিশ্বকাপের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত বলা যায়।

টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট ছিল ব্রাজিল। পেন্টাকে হেক্সায় পরিণত করতে বদ্ধ পরিকর ছিল সেলেসাওরা। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে ভেঙে যায় তাদের সে স্বপ্ন। নেইমারের ইনজুরি ও ফিরে আসার মাঝে রিচার্লিসনের ওই ওভারহেড গোলটা চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। চোখে লেগে থাকবে ক্রোয়াটদের বিপক্ষে নেইমারের গোলের সেই লাতিন ঝলকও।

অরেঞ্জ আর্মিরা প্রথম পর্বে ছিল সাদামাটা। কিন্তু নকআউটে তারাই আবার ছিল বাঁধনহারা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর যেভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছিল তারা, তা মনে থাকবে অনেকদিন। মাঠের খেলায় উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল রেফারি মাতেও লাহজের বেহিসেবি কার্ড প্রদর্শন। আর ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন গালের কথার লড়াইয়ের জবাব হিসেবে টাইব্রেকারে জিতে লিওনেল মেসির উদযাপন তো বিশ্বকাপ ইতিহাসের আইকনিক মুহূর্তের তালিকাতেই জায়গা করে নেবে।

এই আসরের চমক ছিল মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনাল খেলে বিশ্ব ফুটবলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আশরাফ হাকিমিরা। বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়ার মতো দলের গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় তাদের জায়গা করে নেওয়াটাই ছিল বড় চমক। এরপর অ্যাটলাস লায়নরা রূপকথার গল্পে নতুন পাতা যোগ করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন ও আসরের অন্যতম ফেবারিট পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে।

ফাইনালে জিততে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু টুর্নামেন্ট জুড়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল অবিস্মরণীয়।  বিশেষ করে ৬৬’র বিশ্বকাপের ফাইনালে জিওফ হার্স্টের সেই বিতর্কিত হ্যাটট্রিকের পর ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা প্রথম ফুটবলারের উদ্‌যাপনগুলো ছিল টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন দেখা ফরাসীদের প্রাপ্তি।

তবে মরুর বুকের প্রথম গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের সেরা মুহূর্ত  লিওনেল মেসির হাতে ফিফা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য গত দশকে ফুটবল বিশ্ব দেখেছে কি না তা নিয়ে তর্ক হতে পারে অনেক, কিন্তু উত্তরে যে মেসির পাল্লা ভারী হবে তা তো জানা কথা।

 

সর্বশেষ খবর