২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র দিনাজপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে সকাল ১১ টায় দিনাজপুর দশমাইল মোড় এ অবস্থিত ইয়াসমিন এর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মানববন্ধন এর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র দিনাজপুর জেলার সংগঠক নন্দিনী রায় এর সভাপতিত্বে মানববন্ধন এ বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) পাঠচক্র ফোরাম দিনাজপুর জেলার সদস্য সাজ্জাদ চৌধুরী আপেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট দিনাজপুর জেলা সংগঠক অজয় রায়, মেস ও গৃহ পরিচারিকা সমিতি দিনাজপুর জেলার সাধারন সম্পাদক রীতা রায়।
বক্তরা বলেন, ১৯৯৫ সালের ২৪ অগাস্ট পুলিশ হেফাজতে ধর্ষিত হয়ে প্রাণ দিতে হয় ১৫ বছরের ইয়াসমিন আখতারকে। প্রতি বছর দিনটি পালন হয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস বা ইয়াসমিন দিবস হিসাবে। মাকে দেখতে ইয়াসমিন ঢাকা থেকে রওনা দেন গাইবান্ধাগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজ নৈশকোচে। রাতে দিনাজপুরে নেমে যায় সে। এরপর তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার নাম করে পিকআপে তুলে নেয় পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ভ্যানে উঠেই ইয়াসমিনকে বিদায় নিতে হয় পৃথিবী থেকে। ১০ মাইল থেকে দিনাজপুর শহরে আসার পথে ব্র্যাক স্কুলের সামনে ভোরের দিকে পুলিশ ভ্যানে উপস্থিত ৩ জন সদস্য এসআই মইনুল, কনেস্টবল সাত্তার ও অমৃত ইয়াসমিনের শ্লীলতাহানী ঘটিয়ে চলন্ত পিক আপ ভ্যান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে দিনাজপুর। বিক্ষুদ্ধ জনতার ওপর চলে পুলিশের গুলি। নিহত হন সামু, কাদের, সিরাজসহ সাতজন। আহত হয় শতাধিক। এ ঘটনায় ক্ষমা চায় প্রশাসন। শাস্তি পায় অপরাধী পুলিশ। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাকারি তিন পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলার আসামি একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয় ২০০৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর।
ইয়াসমিনের স্মরণে দিনাজপুরের দশ মাইল এলাকায় তৈরী করা হয়েছে ইয়াসমিন স্মরণী।
নারী নির্যাতনের এই যুগান্তকারী প্রতিবাদী ঘটনাকে স্মরণীয় করতেই প্রতিবছর ২৪ আগস্ট দিনটি সারাদেশে ‘নারী নির্যাতন ও প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু আজো সারাদেশে অসংখ্য নারী ও শিশু প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তনু, খারিজা, নুসরাত কত নাম। সমস্ত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের সংগ্রামী ইতিহাস মানুষকে পথ দেখাবে। বক্তারা অবিলম্বে নারী শিশু নির্যাতন বন্ধ এবং নির্যাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি,মাদক-জুয়া-অশ্লীলতা,অপসংস্কৃতি বন্ধের দাবি জানান, সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার, সমকাজে সম মজুরি, গৃহকর্মীদের নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটি, নূন্যতম জাতীয় মজুরির অন্তরভুক্ত করার দাবি জানান।