Tuesday, March 28, 2023

ব্র্যান্ড মোদির ‘সাদা’ শার্টে ‘কালো’ দাগ কতটুকু?

Date:

এ সম্পর্কিত পোস্ট

ডিভোর্স নিয়ে মুখ খুললেন শিখর ধাওয়ান, দিলেন পরামর্শও

নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের ব্যাটসম্যান শিখর...

ভারতের পার্লামেন্টের বাইরে কংগ্রেসের ব্যাপক বিক্ষোভ

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাজা ও তার লোকসভার সদস্যপদ...

অভিনেত্রী আকাঙ্ক্ষার মৃত্যুতে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য!

আত্মহত্যা নয়, হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে–পুলিশের কাছে...

শেষ ম্যাচে নেপাল বধের লক্ষ্য টাইগ্রেসদের

জয় দিয়েই সাফ অনূর্ধ্ব ১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের আসর শেষ...

পাভারের গোলে আইরিশদের হারাল ফ্রান্স

ইউরো বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪-০...

২০১৯ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় দেশটির ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ৩৫২টি আসনে বিজয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম উঠায় দলটি। আর যাকে কেন্দ্র করে বিজেপির ওই বিজয় তিনি নরেন্দ্র মোদি, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন বিজেপির সামনে খুলে দেয় সংবিধান সংশোধনসহ তাদের নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ। তারই ধারাবাহিকতায় কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে বিজেপি সরকার। এক্ষেত্রে যে দুজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন, নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে এসে মোদিকে নিয়ে বিবিসির একটি তথ্যচিত্র ভারতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

কী আছে বিবিসির আলোচিত তথ্যচিত্রে?
২০০২ সাল। সে বছর ইতিহাসের ভয়াবহ এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাক্ষী হয় ভারত। প্রায় তিন দিন ধরে গুজরাটে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এর শুরুটা হয় ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। এদিন গুজরাটের গোধড়ায় একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, যার ফলে অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী মারা যান। এরপরই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই দাঙ্গায় ১ হাজার ৪৪ জন নিহত, ২২৩ জন নিখোঁজ এবং আড়াই হাজার মানুষ আহত হন। নিহতদের মধ্যে ৭৯০ জনই মুসলমান। তবে নাগরিক ট্রাইব্যুনালের রিপোর্টে বলা হয়, দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। যদিও অন্যান্য রিপোর্ট অনুসারে, নিহতের সংখ্যা ছিল দুই হাজারেরও বেশি।

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি দাঙ্গার সময় ধর্ষণ ও ব্যাপক লুটপাটের খবরও পাওয়া যায়। সাম্প্রদায়িক এ দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এই সহিংসতা শুরু করা এবং তাতে উসকানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ আছে, পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তারা নানা নির্দেশনার পাশাপাশি মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তির তালিকাও দাঙ্গাবাজদের হাতে দিয়েছিল। তবে ২০১২ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নরেন্দ্র মোদির সহিংসতায় জড়িত থাকার বিষয়টি খারিজ করা হয়। তবে গত ১৭ জানুয়ারি গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দাবি করে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে বিবিসি। আর এতেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ভারতের রাজনীতিতে।

তথ্যচিত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সম্পৃক্ততা নিয়ে ভারতে কথা চালু থাকলেও বিবিসি এতে নতুন কিছু প্রমাণ হাজির করার চেষ্টা করেছে। এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে কিছু ‘গোপন’ প্রতিবেদন’ বিবিসি হাতে পেয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদন যারা তৈরি করেছিলেন তারা গুজরাট সফর করে এসে ‘গোপন প্রতিবেদনে’ জানান, গুজরাটে যেটুকু সহিংসতার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল তা অনেক কম। সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তারা। এছাড়া মুসলিমদের জাতিগত নির্মূলের উদাহরণও তারা পেয়েছেন বলে ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল।  ওই প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল নরেন্দ্র মোদি গুজরাট হামলার জন্য সরাসরি দায়ী।

এই গোপন তদন্ত প্রতিবেদনের যে অংশটুকু বিবিসির হাতে এসেছে, তা পুরোটাই তথ্যচিত্রে ব্যবহার করেছে তারা। এছাড়া তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে গুজরাট দাঙ্গা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে দায়মুক্তি দিয়েছেন।

জানা গেছে, বিবিসির এ প্রতিবেদনটি তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন মূলত তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘আমি একটি দল গঠন করেছিলাম, যারা গুজরাটে গিয়ে স্বাধীন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। সেই দল ঠিক তাই করেছিল।’  

কতটা প্রশ্নের মুখে ব্র্যান্ড মোদি বিজেপি
বলিউডে শাহরুখ খান যেমন ব্র্যান্ড, তেমনি ভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রেও একই কথাই খাটে। ২০১৪ সালে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এ সময় দলটির প্রবীণ নেতাদের ছাপিয়ে প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন নরেন্দ্র মোদি। সেই থেকে মোদি ব্র্যান্ড চালু বিজেপিতে, এমনকি ভারতের রাজনীতিতেও।

এই মোদি ব্র্যান্ডের জোরে ২০১৯ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি। যে দলটি ১৯৮৪ সালে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল, সেই দল ২০১৯ সালে ৩১৪টি আসন পেয়ে বিপুল পরাক্রমে ক্ষমতায় আসে। বিজেপির এখনকার নেতৃত্ব এবং দলের সমর্থকদের কথায়, এটি সফল হয়েছে মোদির কারণে। মোদি বিজেপির প্রতিটি সমর্থকের কাছে বিপুল জনপ্রিয়। ঠিক এ কারণেই ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপির প্রধানমন্ত্রী মুখ নরেন্দ্র মোদি।

যদিও সে সময় নরেন্দ্র মোদির বয়স হবে ৭৩ বছর। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার নিয়ম না থাকলেও মোদির ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়ে গেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর এটা প্রমাণ হয়ে গেছে, নরেন্দ্র মোদির বিকল্প কোনো নেতা ভারতে নেই। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কংগ্রেস ও বিজেপি‌র হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যায় তার উল্টো। নির্বাচনী ফলাফলে বোঝা যায় বিজেপির ব্র্যান্ড মোদি ভারতবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছেন।

মোদি ব্র্যান্ড বিজেপির জন্য কতটা কার্যকরী তা বোঝা গেছে সাম্প্রতিক গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনেও। এ নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, এমনটাই বলেছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি রেকর্ড সংখ্যক জনসভা এবং পথসভা করেছেন। তার ফলাফল বিজেপি পেয়েছে হাতেনাতে।

যেখানে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, আম আদমি পার্টি নির্বাচনে না জিতলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিরোধী দল হিসেবে হাজির হবে; সেখানে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বিজেপির গেরুয়া ঝড়ে কার্যত উড়ে যেতে দেখা যায় দলটিকে। রেকর্ড সপ্তমবারের মতো গুজরাটের ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। দলটির নেতাদের মতে, এর একক কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদির।

ভারতের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের বাকি আছে প্রায় দেড় বছরের মতো। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে বিবিসির এই তথ্যচিত্র ভারতের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে; এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বা মোদির এতে (বিবিসির তথ্যচিত্র) কোনো ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ বিজেপির বিরুদ্ধে সেভাবে ভারতের বিরোধী দলগুলো দাঁড়াতে পারছে না। যদি বিজেপির বিরুদ্ধে সব বিরোধী দল এক হয়, তবে একটা কথা ছিল।’

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ যেভাবে ভারতের ভূমিকা দেখতে চাচ্ছে, দিল্লি তা দেখাচ্ছে না উল্লেখ করে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন, ‘বলতে গেলে ভারত ইউরোপের সঙ্গে নেই। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের থেকে অনেক ভালো। ঠিক এই সময় মোদির বিরুদ্ধে এমন প্রতিবেদন ভারতকে চাপে রাখতে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মোদির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তো আগেও ছিল। কিন্তু এখন কেন এটা প্রচার করতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পশ্চিমা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এ ধরনের কর্মকাণ্ড আগেও করেছে। তারা যখন যাকে স্বার্থে প্রয়োজন তখন তাকে তালে উঠাবে, আবার যখন প্রয়োজন হবে না নামিয়ে দেবে। বিবিসির হাতে যদি তদন্ত প্রতিবেদন থেকেই থাকে, তাহলে আগে প্রকাশ করা হলো না কেন? বিবিসির কর্মকাণ্ড আমরা ইরাক এবং সিরিয়া এমনকি আফগানিস্তানেও দেখেছি। তারা সেখানে পশ্চিমাদের সকল কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে। আর পশ্চিমারা এই দেশগুলোতে কী করেছে আমরা জানি।’

মোদির জনসমর্থনে প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মোদির বিরুদ্ধে এই তথ্যচিত্র তার জনসমর্থন কমার বদলে আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ তথ্যচিত্রে শুধু মোদি নয়, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে বেশিরভাগ ভারতীয়র বিপক্ষে যাবে এই তথ্যচিত্র। তারা মনে করবে, মোদি শুধু নয় ভারতকেও প্রতিপক্ষ বানানো হয়েছে। যখন বিশ্বের আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ভারত এখন কিছু বিষয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে, এমন সময় বিবিসির এই প্রতিবেদনকে ভারতবাসী মনে করবে তাদের থামিয়ে দেয়ার জন্যই এমন কিছু করা হয়েছে। তারা বিষয়টি ভালো চোখে দেখবে না।’  

ইন্ডিয়া টুডেসি পোলের জনমত জরিপ
এদিকে মোদিকে নিয়ে এমন তথ্যচিত্র প্রকাশের ঠিক কয়েকদিন পরই একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। জনমত জরিপ সংস্থা সি-পোলের সঙ্গে যৌথ জরিপে তারা জানিয়েছে, এখনই যদি ভারতের নির্বাচন হয় তাহলে আবারও বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। আর নরেন্দ্র মোদিকে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে বলে দিয়েছে রাজনৈতিক দলটি, সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন-এমনই দাবি ওই সংবাদমাধ্যমের। ইন্ডিয়া টুডে-সি পোলের জনমত জরিপে মোট ১ লাখ ৪০ হাজার ৯১৭ জন ভারতীয় অংশ নেন। ইন্ডিয়া টুডের দাবি, এখনই যদি ভোট হয়, তাহলে ২৮৪টি আসনে জিতবে বিজেপি, যা লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজনীয় ২৭২-র থেকে বেশি।

তবে জনমত জরিপ যাই বলুক না কেন, বিবিসির তথ্যচিত্র প্রকাশে বিচলিত হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি পার্টি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘বিবিসির এই তথ্যচিত্র ভারতে দেখানো হয়নি। এই তথ্যচিত্রে ভারতের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের সম্পর্কে ইচ্ছেমতো বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাদের সম্পর্কে নিন্দা করা হয়েছে, যা রীতিমতো পক্ষপাতদুষ্ট।’    

অন্যদিকে বিজেপির নেতারা দাবি করেছেন, এই তথ্যচিত্রের পেছনে চীনের হাত রয়েছে। বিজেপি নেতা এবং রাজ্যসভার সদস্য প্রবীণ আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি বলেন, ‘বিবিসি কেন ভারতবিরোধী হয়ে উঠল, সেটা বোঝার সময় এসেছে। আসলে বিবিসির অর্থের দরকার ছিল। চীন সেই টাকা দিয়েছে।’

এদিকে ভারতজুড়ে তথ্যচিত্রটি বন্ধে উঠে পড়ে লেগেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, ওই তথ্যচিত্র ‘ব্লক’ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশ ইউটিউব ও টুইটারকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তথ্যচিত্রটি দেশটির বেশ কয়েকটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া-মিলিয়া ইউনিভার্সিটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখানো হয়েছে বিবিসির ওই তথ্যচিত্র। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে তথ্যচিত্রটি যে না দেখাতে পারে তার জন্য জোর তৎপরতা চালানো হয়েছে। এমনকি গ্রেফতারও করা হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে।

বিবিসির তথ্যচিত্র যদি প্রপাগান্ডা হয় তবে ভারত সরকার এবং বিজেপি কেন এমন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘বিজেপি খুবই সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। তাদের কর্মী এবং নেতারা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। দলটির দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। অনেকে মনে করতে পারেন বিজেপি এবং ভারত সরকার এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে চুপ থাকলেই ভালো হতো। হয়তো অন্য কোনো রাজনৈতিক দল তাই করতো। তবে বিজেপির মতাদর্শ অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে ভিন্ন। তারা যদি প্রতিক্রিয়া না দেখাতো তাহলে বরং তাদের কর্মীদের কাছে ভিন্ন বার্তা যেত। মোদির বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে সেটা যে চুপ করে থাকার বিষয় নয়, সেটা তাদের কর্মীদের বোঝাতেই সরকার এমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুসারে, এখন সবকিছু ছাপিয়ে দেশটিতে বিবিসির তথ্যচিত্রই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এর মধ্যেই বিবিসির তথ্যচিত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে আনা দুটি মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুনতে রাজি হয়েছে। দেশটির প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চে আগামী সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এই মামলাগুলোর শুনানি হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দিক না কেন, ভারতের রাজনীতিতে বিবিসির তথ্যচিত্রের আদৌ কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা বুঝতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত।

সর্বশেষ সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here