Homeশীর্ষ সংবাদমেট্রোরেল সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে: ব্লুমবার্গ

মেট্রোরেল সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে: ব্লুমবার্গ

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। শত বাধা অতিক্রম করে ঢাকাবাসীর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। এটা উজ্জ্বল করবে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর এমনটাই বলছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ছয় মাসের মাথায় মেট্রোরেল বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। বুধবার ঢাকাবাসীর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন, যা এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নগরীর আগারগাঁও পয়েন্টে এলিভেটেড ভায়াডাক্টের প্রথম অংশ এবং এমআরটি লাইন-৬-এর ৯টি স্টেশনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মোট ২২,০০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১৬,৬০০ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ঢাকায় মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। এটির উদ্বোধন শেখ হাসিনা সরকারকে অতিপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সুবিধা দেবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে। ফলে শেখ হাসিনা ও তার দল চাপের মুখে রয়েছেন।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে দুর্বার গতিতে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আমরা আজকে আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের মুকুটে সংযোজিত করলাম।

এদিন শেখ হাসিনা নিজেই প্রথম যাত্রী হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। এটি বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

মেট্রোরেল শুরুতে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। বাকি অংশের কাজ শেষ হলে খুলে দেয়া হবে। এর ফলে রাজধানীবাসী উত্তরা থেকে মতিঝিল সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন। ডিএমটিসিএলের তথ্যমতে, মেট্রোরেল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে। শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিটের মতো। পরে যাত্রার সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে।

বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্সির পরামর্শক এবং দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন। আপনি যদি ভারতের  অনেক শহরের ক্ষেত্রে দেখেন, সেখানে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া মানুষদের বাস্তবতা অনেকটাই পাল্টে গেছে। নারীদের জন্য এ পরিবহন খুবই নিরাপদ একটি মাধ্যম। দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যার গুরুত্ব কোনোভাবেই তুচ্ছ নয়।’

রামা অবশ্য বলেন, অবিলম্বে যানজট সমস্যা দূর হয়ে যাবে, তা ভাবা বোকামি। কারণ, যতবার একটি দেশ গণপরিবহনের অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ততবারই রাস্তার ৯০-৯৫ শতাংশ খালি জায়গা দখল করে নেয় বাড়তি পরিবহন। আপনার শহর যত বড়, আপনি সাধারণত যাতায়াতের জন্য তত বেশি সময় ব্যয় করেন। যানজটের কারণে সৃষ্ট খরচ অনেকাংশেই শহরের সুবিধাগুলো উপভোগের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ২০২২ সালের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মতে বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শেষ দিক থেকে সাত নম্বরে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। অর্থাৎ বাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার স্থান সপ্তম।

শুরুর দিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ (মূল্য সংযোজন কর) বিভিন্ন কারণে ব্যয় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর