দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে। স্থানীয় শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হবে বিকেল ৫টায়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই জয়ী হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভোট না পাওয়ায় শীর্ষ দুটি দলের মধ্যে রানঅফ ভোট হওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন ইসিএম। তবে এই নির্বাচনে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে চীন ও ভারত। পর্যটনের লীলাভূমি এই দ্বীপরাষ্ট্রটির ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সক্রিয় উভয় দেশই।
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন (ইসিএম) চেয়ারম্যান ফুওয়াদ তৌফিক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, সব ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। একঘণ্টা বাড়িয়ে ব্যালট বাক্স আজ বিকেল ৫টায় বন্ধ করা হবে। ভোটাররা সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও জাননান, ১৮৭টি দ্বীপের ৫৮৬টি পোলিং স্টেশনে মোট ২ লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ জন ভোট দেবেন। এর বাইরে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন ও আবু ধাবিতেও রয়েছে ভোটকেন্দ্র। প্রতিটি ভোট বাক্স বন্ধ হওয়ার ৩০ মিনিট পর ভোট গণনা শুরু হবে এবং ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশিত হবে রাত ৮টার পর।
ইসিএম চেয়াম্যান জানান, নির্বাচনের সাধারণ আইন অনুসারে চিহ্নিত করার জন্য একটি আঙুল ব্যবহার করা উচিত। যদি পরপর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য অন্য আঙুল ব্যবহার করা যাবে। আজ রান অফ ভোটের জন্য ভোটারদের বাম হাতের রিং আঙুলের একটি চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করা হবে বলে জানান। প্রথম দফার নির্বাচনের সময় যা বাম তর্জনীতে ভোটারদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। এতে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার জন্য টেকসই মার্কার ব্যবহার করা হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো লড়ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ। তার বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা আবদুল্লাহ ইয়ামিন। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে ১১ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এতে সংবিধানের ১০৯ (ফ) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারান তিনি। এরপর এ বছরের আগস্টে উচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে ইয়ামিনের পক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ইয়ামিনের পরিবর্তে ইব্রাহিম সলিহর প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে আবির্ভূত হন ড. মুইজু। ইয়ামিন প্রথমে নির্বাচন বয়কটের কথা বললেও পরবর্তীতে প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) ও পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) নিয়ে গঠিত বিরোধীদের জোটের হয়ে ইয়ামিনের পরিবর্তে নির্বাচনে অংশ নেন ড. মুইজু। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল এই দুজনের মধ্যেই। প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৮৫ ভাগ পেয়েছেন এই দুজন। বাকি ৬ জন প্রার্থী মিলে পেয়েছেন অবশিষ্ট ১৫ ভাগ ভোট।
রানঅফ ভোটের শীর্ষ দুটি দলের প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে এগিয়েছেন ক্ষমতাসীন এমডিপি দলের প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ ও বিরোধীদলীয় জোট পিপিএম/পিএনসি দলের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ মুইজু। দেশটির ভোটারদের মন জয়ে দিয়েছিলেন তারা নানান প্রতিশ্রুতি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোট গণণার পর প্রাপ্ত ফলে দেখা গেছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি কেউই। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ মুইজুর ভেতর হয়েছে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অনেককে অবাক করে দিয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন মুইজু। সলিহ পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ ভোট। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমপক্ষে ৫০ ভাগ ভোট কেউই না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপে গড়ায়।