Homeজাতীয়ভূমিহীন সেই বিসিএস কর্মকর্তার জীবনের গল্প মনোযোগ দিয়ে শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

ভূমিহীন সেই বিসিএস কর্মকর্তার জীবনের গল্প মনোযোগ দিয়ে শুনলেন প্রধানমন্ত্রী

ভূমিহীন কৃষকের ছেলে আজ বিসিএস কর্মকর্তা। শত বাধা পেরিয়ে সাফল্যের আলোয় আলোকিত। এই পথের বাঁকে বাঁকে প্রতিবন্ধকতার হাজারো দেয়াল টপকাতে হয়েছে পিরুকে। জীবন সংগ্রামের সেই গল্প বললেন তিনি, আর মনোযোগ দিয়ে শুনলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ এবং ৫টি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই মঞ্চে নিজের গল্প শোনান পিরু।

বিসিএস এ কর্মকর্তা বলেন, আমি স্বপ্নপূরণ ও ভাগ্য বদলের গল্প বলতে এসেছি। এ স্বপ্নপূরণ আমার মতো হাজারো তরুণের স্বপ্ন পূরণ, ভাগ্যবদল চিরায়িত বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি প্রাণের গল্প। ফরিদপুর জেলা সোয়ারামপুর গ্রামের ভূমিহীন এক কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা এক যুবক আমি। বাবা ও ভাইদের সঙ্গে জমিতে সেচ দেয়া, চুক্তিতে ধানপাট কাটা, অন্যের ক্ষেত নিড়ানি দেয়াই ছিল আমার পরিবারের আয়ের উৎস। ঝড়বৃষ্টির রাতে ছনের চালা উড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘুম হতো না আমাদের। সেই আমার ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব কিনা সে নিয়েও আশঙ্কা ছিল আমার।

তিনি বলেন, আমার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নটা প্রায় শেষ হতে যাচ্ছিল। যদি না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত বিজ্ঞান ও ইলেকট্রন্কি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেতাম। কেননা অর্থের অভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোথাও ভর্তি ফরম তুলতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মাঝে মধ্যে আমার ভাইয়ের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজেও যেতে হতো। প্রথমবর্ষে প্রাইভেট টিউশন না পাওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় আমি সকালে নাস্তা করতে পারিনি।

বিসিএস এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ১৫ টাকায় দুপুরে খাবার আর ১২ টাকায় রাতের খাবার এই মোট ২৭ টাকায় আমার খাবারের খচর রাখতে হতো। রাতের খাবারের সময়ের পর থেকে প্রায় ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকে ল্যাব থেকে আসার সময় ক্ষুধায় বাকা হয়ে যেতাম। এমন একটা অনিশ্চিত জীবন থেকে উঠে এসে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সামনে কথা বলতে পেরে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অসংখ্য তরুণের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল সিভিল সার্ভিসের চাকরির। সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ মেধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন নিশ্চিত করায় আপনাকে (প্র্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ। ৪০তম বিবিএসের উত্তীর্ণ হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হয়ে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে, আজ নিজেকে ধন্য মনে করছি।

তিনি বলেন , এখানেই আমার জীবনের গল্পের শেষ নয়। ২০২০ সালে আগস্ট মাসে আমার চাকরির যোগদানের প্রথম দিনে আমার বাবার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। এর দুই মাস আগে আমার বোনের স্বামী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সন্তানসম্ভবনা বোন ও তার দুই সন্তান আসে আমাদের সংসারে। চরম আর্থিক সংকটে যখন বাবার চিকিৎসা প্রায় বন্ধ, তখন সরাসরি বাবার চিকিৎসরার জন্য আপনার নিকট সাহায্য চেয়েছিলাম। বিশ্বাস ছিল সারা পাব কিন্তু এতদ্রুত পাবো সেটা ছিল কল্পনাতীত। চিকিৎসা শুরুর ১৫ মাস পর বাবা মারা যান। এর কিছুদিন পর মেজ ভাই ও বোনের শরীরেও ক্যানসার শনাক্ত হয়। পরিবারের এমন মানবিক বিপর্যয়ের সময় আবারও আপনার কাছে সাহায্য চাই; তখনও আপনি হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের বিপদে সাহায্যকারী হিসেবে বার বার আর্বিভূত হওয়া প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি কৃতজ্ঞা জানাতে পেরে, আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে দেশকে বিশ্ব দরবারে নতুন রুপে পরিচিত করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছেন। আমি গ্রামে যাই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে। একটা সময় অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ফেরিতে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিত হতো। তখন তাকে বলেছি আর কয়টা দিন অপেক্ষ করুন; কেমোথেরাপি নিয়ে আপনাকে আর কষ্ট করে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না,  কষ্ট করে নদী পাড়ি দিতে হবে না। এখন চোখের নিমিষে প্রমত্ত পদ্মা পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাই। তখন মনে হয়, আপনি কীভাবে চিরায়িত মানুষের দুঃখের গল্পগুলোকে স্বপ্নে পরিণত করেছেন।

বিসিএস এ কর্মকর্তা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশকে তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যে, নিরন্তর প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছেন আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আজ আমরা আপনাকে কথা দিতে চাই; আমরাই হবো আপনার স্বপ্নরথের সারথি।

সর্বশেষ খবর

Exit mobile version