Homeঅর্থনীতিসুদহার বাড়ানো কি কমাতে পারবে মূল্যস্ফীতি

সুদহার বাড়ানো কি কমাতে পারবে মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি কমাতে লাগাতার ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে বরং আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়ে ভোক্তাদের খরচ আরও বাড়াবে। এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় মূল্যস্ফীতি কমানোর কার্যকর নীতি কৌশলও কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না।

মূল্যস্ফীতি কমাতে লাগাতার ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে বরং আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়ে ভোক্তাদের খরচ আরও বাড়াবে। এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় মূল্যস্ফীতি কমানোর কার্যকর নীতি কৌশলও কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বেশ হতাশ। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের বাজার দরও ভালো যাচ্ছে না। একজন ব্যবসায়ী বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা বেশ খারাপ; বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য। তাছাড়া এখন মানুষ কিনবে কী! বাজরের যে অবস্থা, সবকিছুর দামই বেশি।

এদিকে, নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা ক্রেতাদেরও। খরচের ভার বহনের হাত থেকে রেহাই মিলছে না তাদের। এক ক্রেতা বলেন, ‘আটা ও তেলসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। এতে মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকাই কঠিন। বাজারটা আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আসলে আমাদের জন্য ভালো।’

তাহলে কি রেহাই পাবেন না মাসের পর মাস ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে পড়ে থাকা ভোক্তারা? এমন প্রশ্নে জর্জরিত বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য কাজ করছে চলতি মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামাতে এক্ষেত্রে তারা ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর পথে হাঁটছেন।

যদিও আমদানি ও রফতানিকারকরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোটা হিতে-বিপরীত ফল দেবে। এতে ভোক্তার কাঁধে চাপবে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা। কারণ এতে যেমন কমবে বিনিয়োগ, তেমনি বাড়বে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি ব্যয় ও উৎপাদন খরচ। দিনশেষে যার মাশুল ভোক্তাকেই গুনতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,

আমাদের বাজারে যে পণ্য সরবরাহ হয়, সুদহার বাড়ালে দিনশেষে সেব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কারণ যখন সুদহার বেশি দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হবে, তখন মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, কমবে না। এখন ধরা যাক, আমি ঋণই নিলাম না; ব্যবসাও করলাম না। তাতে আবার বাজারে দ্রব্যের সংকট দেখা দেবে। সংকট দেখা দিলে মূল্যস্ফীতি তখন আরও বাড়বে।

রেপো আর স্মার্ট রেট বাড়ার চূড়ান্ত যোগফল ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে পারেনি। আর স্বস্তি আনতে পারেনি নিত্যপণ্যের বাজারেও। এর পরিষ্কার পরিসংখ্যান তুলে ধরে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন পথ বের করতে হবে।

নভেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৪৯ শতাংশ হয়েছে এবং সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০.৭৬ শতাংশ। গ্রাফিক চিত্র

এক্ষেত্রে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন,

বাংলাদেশ ব্যাংক যখন প্রথমবার যখন সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন তার ফলাফল বাজারে পড়েনি। খাদ্য মূল্যস্ফীতিই সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করে। কিন্তু এ মুহূর্তে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। তা জানুয়ারিতে আরও কমবে। এর পরের মৌসুমে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কেমন হয়, তা দেখে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো। কিন্তু এখন যেহেতু সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে, আমি মনে করি এখানে পুর্নবিবেচনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

এদিকে, বাজার বিশ্লেষকদের শঙ্কা, লাগাতার সুদহার বাড়ানো শিল্প আর সেবাখাতে কর্মসংস্থান কমিয়ে দিতে পারে। যার কারণে সংকুচিত হয়ে যেতে পারে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা ভোক্তাদের আয়ের পথ।

সর্বশেষ খবর