সংবাদের শিরোনাম হওয়ায় ক্ষোভ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলেন যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দ শেষে অফ দ্যা রেকর্ড বলে কৌশলে কুরুচিপূর্ণ শব্দটি ব্যবহার করেন। এসময় সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখেও পড়েন তিনি।
সম্প্রতি যশোরের পুলিশ সুপারের বদলি চেয়ে ইসিতে আবেদন করে যশোর-১ আসনের ভোটার জাকির হোসেন আলম ও যশোর- ৫ আসনের ভোটার আওয়ামী লীগ নেতা জিএম মজিদসহ চার নেতা।
জিএম মজিদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুর বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলায়। তিনি মণিরামপুরের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের জামাই হিসেবে সু-পরিচিত। পুলিশ সুপার পদোন্নতি পেলেও তাকে বদলি করা হয়নি। ফলে তিনি নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারেন।
আর যশোর-১ আসনের ভোটার জাকির হোসেন আলমের আবেদন উল্লেখ করা হয়, শার্শার বর্তমান এমপি আফিল উদ্দীনের সঙ্গেও রয়েছে পুলিশ সুপারের চরম ব্যক্তি সম্পর্ক। তাকে পাশ করানোর জন্য কয়েক কোটি টাকার আর্থিক চুক্তি হয়েছে। যা আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাশাপাশি সময় টিভিতেও সংবাদ প্রকাশ হয়। এতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
সোমবার সকালে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার দেখা হয়। এ সময় তিনি সময় টিভির ক্যামেরাপার্সনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সময় টিভিতে আর কি নিউজ হবে?
এরপর দুপুরে প্রতীক বরাদ্দ শেষে ব্রিফিং করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। পরে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান নিয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সব প্রার্থীকেই সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে যশোর পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
বক্তব্য শেষে তিনি অফ দ্যা রেকর্ড এ কথা বলার জন্য উপস্থিত সকল ক্যামেরাম্যানকে তাদের ক্যামেরা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর তার বদলি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনারা তো আমাকে চেনেন। আমি তিন বছরেরও বেশি সময় এ জেলায় দায়িত্ব পালন করছি। আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদে এমপি আফিল সাহেবের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কি কোন প্রমাণ আছে। রাগান্বিত স্বরে বলেন, অ্যানি মাদার অব সান বলতে পারবে আমি টাকা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি কিন্তু মানহানির মামলা করতে পারতাম। আমি করিনি।
একসময় সময় টিভির এ প্রতিবেদক তার এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের বাজে শব্দ ব্যবহার করা ঠিক হয়নি উল্লেখ করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার দ্রুত ওই কক্ষ ত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, প্রলয় কুমার জোয়ারদার ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক আদেশ যশোরের এসপি হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। ২৪তম ব্যাচে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেয়া প্রলয় কুমার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। যশোর আসার পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রোটকল অফিসার ছিলেন এই বিষয়টি অবগত করে নিজের প্রভাব জাহির করেন।