Homeরাজনীতি‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ সবাই পাবে ইউনিক হেলথ আইডি

‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ সবাই পাবে ইউনিক হেলথ আইডি

সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে দলটির দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচনের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ইশতেহারে টানা তিনবারের ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ রূপকল্প-২০২১ এর ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১ এর কর্মসূচিতে মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণসেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করার কথা বলেছে।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে শুধু পাঁচ বছর নয়, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কথাও উঠে এসেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী ইশতেহারে বলেন, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি দেয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে।

সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব নাগরিককে একই রকম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্থাপন করা হবে আন্তর্জাতিক মানের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল।’

স্বাস্থ্য ব্যয় সহজ করার জন্য স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চালু করারও ঘোষণা দেন তিনি।

কোভিডের থেকে শিক্ষা নিয়ে মহামারি ঠেকাতে উদ্যোগের কথাও তুলে ধরা হয় ইশতেহারে। শেখ হাসিনা বলেন, সম্ভাব্য মহামারি/অতিমারি মোকাবিলার জন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে সব যন্ত্রপাতি ও জনবল দিয়ে প্রস্তুত রাখা হবে। বিভাগীয় শহরে উন্নত মানের ল্যাবরেটরি স্থাপনের কার্যক্রম নেয়া হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে একটি পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথাও জানান তিনি।

এছাড়া ভ্যাকসিন আবিষ্কারে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগকে সরকার উৎসাহ ও সহায়তা দেবে বলেও ইশতেহারে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ভ্যাকসিন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের টিকা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ওষুধ শিল্পের উন্নতির বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ফলে ওষুধশিল্প যাতে মেধাস্বত্বের বাধা অতিক্রম করতে পারে, সে জন্য দেশে এপিআই (একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) শিল্প উৎসাহিত করা হবে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত এপিআই ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

হেলথি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়টিও অধিকতর কার্যকর করার কথা জানান তিনি।

স্বাস্থ্যখাতে আওয়ামী লীগের অর্জন

কোভিড অতিমারি মোকাবিলার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকারের সাফল্য বিশ্বে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। টিকা আবিষ্কারের পর থেকে অদ্যাবধি ৩৭ কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় কোভিড টিকা আবিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকা প্রদানের হার ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৭৫ শতাংশ। যা বর্তমান সরকারের সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪ শতাংশে এ উন্নীত হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংখ্যা ২০০৬ সালে ছিল ১৪টি এবং সাধারণ শয্যাসংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৫৭৯টি। বর্তমানে হাসপাতালের সংখ্যা ৩৭টি এবং সাধারণ শয্যাসংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৭১ হাজারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৪২টি জেলা হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিতে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

ভালো মানের চিকিৎসক নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসকদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাত্র একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, বর্তমানে হয়েছে ৫টি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ২০০৬ সালে ছিল ২৬টি, যা বর্তমানে ৩ গুণ বেড়ে ৭৩টি হয়েছে। আর্মি কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬টি। ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিট ৩টি থেকে ১০টি হয়েছে। বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ হয়েছে ২৭টি।

এছাড়া মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলস (ম্যাটস) ২০০৬ সালে ছিল ৭টি, বর্তমানে ১৩টি। আইএইচটি (ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি) ২০০৬ সালে ছিল ৩টি, বর্তমানে ১৪টিতে উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইশতেহারের তথ্যমতে, ২০০৬ সালে সরকারি নার্সিং কলেজ ছিল ৫টি, বর্তমানে তা ৬৯টিতে উন্নীত হয়েছে; আরও ১১টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি নার্সিং কলেজের সংখ্যা ৩৫০টিতে উন্নীত হয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশে চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৩৩৮ জন। তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৭৩ জনে। নার্স ও নন-মেডিকেল কর্মচারীদের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সরকারি নার্স ২০০৬ সালে ছিল ১৩ হাজার ৬০২ জন, যা ২০২৩ সালে সোয়া ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৫৭ জন। মেডিকেল টেকোলজিস্টের সংখ্যা ২০০৬ সালের ১ হাজার ৮৮৮ জন থেকে ৩ গুণ বেড়ে ২০২৩ সালে  দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৪ জনে।

এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির আওতায় গর্ভনিরোধক বিস্তারের হার বর্তমানে ৬৪ শতাংশ, যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৪৮ শতাংশ; ৭০ শতাংশ প্রসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অ্যাটেনডেন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর অংশ হিসেবে ন্যাশনাল কল সেন্টার জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে বর্তমানে ২৪৪টি টেলিমেডিসিন সেন্টার চালু আছে, যার কোনোটিই আগে ছিল না।

শিশু স্বাস্থ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ এবং শিশুর সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উদ্দেশ্যে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৯৮.৭ শতাংশ শিশুকে জাতীয় ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন প্রোগ্রামের আওতায় আনা হয়েছে।

২০০৬ সালের তুলনায় শিশুস্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ৫ বছরের কম বয়সী খর্বকায় শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে ২৪ শতাংশে এবং কৃশকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে মাত্র ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বল্প ওজনের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ, যা আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে কমেছে।

আওয়ামী লীগের আমলে ওষুধ শিল্পের উন্নতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, দেশে তৈরি ওষুধ ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে। ওষুধশিল্পের রফতানি আয় ৬০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, যা ২০০৬ সালের তুলনায় ২২ গুণ বেশি।

সর্বশেষ খবর