গাজা যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এতে নতুন করে উত্তেজনা ও সশস্ত্র সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও পাকিস্তানের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে কিছু দেশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পাকিস্তানের হামলায় ইরানে চার শিশুসহ নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর আগে ইরানের হামলায় পাকিস্তানে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। উভয় দেশই ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করেছে।
কী বলছে ইরান ও পাকিস্তান?
হামলার পর এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তান ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং বিশেষভাবে’ ইরানে সামরিক হামলা চালিয়েছে। ‘মার্গ বার সরমাচার’ নামে গোয়েন্দাভিত্তিক এ অভিযান চালিয়ে তারা ‘বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে।
হামলার ব্যাখ্যায় ইসলামাবাদ বলেছে, এর আগেও তারা ‘ইরানের অভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রণহীন স্থানগুলো পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছে। কিন্তু যথাযথ পদক্ষেপের অভাবের কারণে… এই সন্ত্রাসীরা দায়মুক্তিসহ নিরপরাধ পাকিস্তানিদের প্রাণ কেড়ে নেয়া অব্যাহত রেখেছে।’
এর মধ্যেই বুধবার (১৭ জানুয়ারি) পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে ইসলামাবাদ। একইসঙ্গে ইরানের পাকিস্তানের দূতকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়া, দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইডলাইনে বক্তৃতাকালে বলেছেন,
তেহরান একটি ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং পাকিস্তানের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের নাগরিকদের কেউ লক্ষ্যবস্তু ছিল না…।
এছাড়া উভয় পক্ষই ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ’ বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছে, যা কিছুটা আশা দেখাচ্ছে যে আর কোনো রক্তপাত ছাড়াই হয়তো চলমান সংকটের সমাধান করা যেতে পারে।
কোন পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত?
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘনের জন্য ইরানের কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। ওয়াশিংটন বর্তমানে লোহিত সাগর অঞ্চলে তেহরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে। গোষ্ঠীটিকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছে বাইডেন প্রশাসন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন,
একদিকে ইরান এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের প্রধান অর্থদাতা এবং অন্যদিকে (এটি দাবি করে) সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এই পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার।
এদিকে ইরান-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিকদের বলেছেন,
আমরা দুই পক্ষকেই উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে এবং যৌথভাবে যেন এই অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ রাখা যায়; সেই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে সম্ভবত চ্যালেঞ্জিং একটি অবস্থানে রয়েছে বেইজিং। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আর ইরান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল আমদানি করে দেশটি।
অন্যদিকে সরাসরি কিছু না বললেও সন্ত্রাসবাদের প্রতি নিজেদের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা জানিয়েছে ভারত। তবে প্রতিটি দেশের ‘আত্মরক্ষা’র অধিকার রয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জসওয়াল বলেছেন,
এটি ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। আমরা সন্ত্রাসবাদের প্রতি আপোষহীন। তবে দেশগুলো তাদের আত্মরক্ষার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়, তা আমরা বুঝতে পারি।