মিয়ানমার জান্তা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলো আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। দীর্ঘ ৮ বছরের যুদ্ধবিরতির পর শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ফের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে পাও ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএনএলও)। এর ফলে এরই মধ্যে পতনের দ্বারপ্রান্তে থাকা জান্তা কর্তৃপক্ষ আরও চাপের মুখে পড়েছে।
দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন মতে, চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্যভিত্তিক গোষ্ঠীটির নেতারা বলেছেন, একনায়কতন্ত্রের অবসান না হওয়া পর্যন্ত এবং মিয়ানমারের সকল জনগণের জন্য একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে তাদের যোদ্ধারা।
পাও ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশন এক বিবৃতিতে বলেছে,
অনেক আশা নিয়ে গত আট বছর ধরে (সরকারের সঙ্গে) শান্তি সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরও কোনো রাজনৈতিক ফল অর্জন করা যায়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
সারা দেশে জাতিগত নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ স্বৈরাচারের হাতে নিপীড়িত হচ্ছে। বর্তমান যুদ্ধ সেই স্বৈরাচার ও তাদের হাতে নিপীড়িতদের মধ্যকার যুদ্ধ।
দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন মতে, শান রাজ্যের শি সেং উপশহর এলাকায় এরই মধ্যে জান্তা বাহিনী ও পিএনএলও’র যোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে। এলাকাটি পাও স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের অধীনে হওয়া সত্ত্বেও এটা এখন জান্তা সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে।
পিএনএলএ শুক্রবার জানিয়েছে, এই লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে তাদের যোদ্ধারা শি সেং উপশহরে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদসহ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৪২৪ নামে জান্তা বাহিনীর পুরো একটা ব্যাটালিয়নকে নিস্ক্রিয় করেছে।
পিএনএলও ২০১৫ সালে ন্যাশনওয়াইড সিসফায়ার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনসিএ) নামে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তির পর সরকারের সঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরু করেন গোষ্ঠীটির নেতারা। ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পরও তারা সেই শান্তি আলোচনা অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে জান্তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়।
পতনের মুখে জান্তা সরকার
মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সামরিক সরকারের প্রধান হন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তবে সেনাবাহিনীর শাসনকে মেনে নেয়নি দেশটির জনগণ। গণতন্ত্রের দাবিতে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে তারা।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করে জান্তা সরকার। যার ফলে রাজপথ ছেড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রপন্থীরা। যোগ দেয় জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে।
যারা পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ) নামে গত প্রায় তিন বছর ধরে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট অব মিয়ানমার নামে একটি বিকল্প সরকার।
সম্প্রতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তীব্র আক্রমণের মুখে পতনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে জান্তা সরকার। জান্তা সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর তুমুল আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে।
মূলত গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিন বিদ্রোহী (আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়ান্স আর্মি ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়ান্স-এর যোদ্ধারা জান্তা বাহিনীর ওপর প্রবল আক্রমণ শুরু করে।
এই আক্রমণের মধ্যদিয়ে গত চার মাসে চিন, শান ও রাখাইন এই তিন রাজ্যের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত চৌকিম সামরিক ঘাঁটি এবং বাণিজ্যিক করিডরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, উত্তরে শান রাজ্যের প্রধান শহর লাশিওতে এরই মধ্যে জান্তা বাহিনীর পতন হয়েছে। পশ্চিমে রাখাইন রাজ্য অথবা থাইল্যান্ডের সীমান্তে কারেননি রাজ্যেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা সেনারা।
বিদ্রোহীরা এই রাজ্যের রাজধানী লোইকাও দখলের কাছাকাছি রয়েছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনা সামরিক মনোবলে ব্যাপক চিড় ধরাতে পারে এবং সেনাশাসনের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।