Homeরাজনীতিমামলা নিয়ে সত্যিই বিপদে আছে বিএনপি, বললেন আইনজীবীরা

মামলা নিয়ে সত্যিই বিপদে আছে বিএনপি, বললেন আইনজীবীরা

মামলায় দিশেহারা বিএনপি। শীর্ষ নেতাদের মুক্তিতে স্বস্তি ফিরলেও এসব মামলায় হাজিরার দুশ্চিতায় ঘিরে ধরছে তাদের। সম্প্রতি সময় সংবাদকে এসব কথা জানান দলটির আইনজীবীরা।

গতবছরের ২৮ অক্টোবরের পর জেলে যাওয়া নেতাকর্মীদের জামিনে বের করার আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলেও সাজা হওয়া নেতাদের মুক্ত করতে, দীর্ঘ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবীরা। কারাগারে থাকা অনেক কর্মী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আইনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তাদের।

একের পর এক কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। কারামুক্তির পর শারিরীক ধকল কাটাতে বাসাতেই থাকছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস। এছাড়া ঢাকাসহ জেলাপর্যায়ের অনেক মধ্যম সারির নেতাও সম্প্রতি জামিনে বের হয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়েছেন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন।

এছাড়া কারাগারে মুক্তির প্রহর গুণছেন অন্তত এক ডজন শীর্ষ নেতা। এক/দুটি মামলায় জামিন মিললেই তারাও খুব শিগগিরই কারামুক্ত হবেন। তবে দলটির আইনজীবীদের জন্য সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের মুক্ত করার বিষয়টি। এছাড়া জামিন পাওয়া মামলায় হাজিরার দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে তাদের।

বিএনপিপন্থি আইনজীবী জয়নুল মিজবাহ বলেন,

জেলে থাকা পরিবারের সদস্যরা আমাদের প্রচণ্ডভাবে চাপ দিচ্ছেন, তাদের বের করে আনতে। পরিবারের মূল ব্যক্তি না থাকলে যা হয়, অনেক ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। অসহায়ত্ব তাদের মধ্যে সব সময় কাজ করে। আশা করছি, কারাগারে থাকা নেতাকর্মী মুক্তি পাবেন। আমার কাছে মনে সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, বিরোধীদলের জন্য যদি এরকম থেকে যে, তোমরা এত মামলা খেলে পুরস্কার পাবে, তাহলে মামলা খাওয়ার জন্য একটা পুরস্কার পেতেও পারত বিএনপি। দলের ছোট নেতাকর্মীদের আয়ের তেমন ব্যবস্থা নেই। যখন সাজা হয়েছে, তখন তারা বাড়িঘর ছেড়েছেন। তারা খুবই বিপদগ্রস্ত আছেন। যারা কারাগারে আছেন, তাদের জন্য আপিল করা এবং আপিলে জামিন পাওয়া এবং পরবর্তীতে আপিলের ফলাফল কি হবে, সেটা নিয়ে তারা খুব শঙ্কিত। দলের জন্য এবং নেতাকর্মীদের জন্য মামলা হওয়া এর চেয়ে বিপদ আর হতে পারে না। বিএনপি মামলা নিয়ে সত্যিই বিপদে আছে। এই বিপদ দেখানোও যায় না, বলাও যায় না।

এতো গেলে শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতাদের মামলার কথা। বিএনপির আইনজীবীদের ধারনা, কারাগারে থাকা অনেক কর্মী এখনও আইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারছেন না তারা।

অ্যাডভোকেট মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন,

আমাদের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়নি। তাদের পরিবারের তেমন কেউ নেই হয়ত, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মতো। তারা দেশেকে ভালোবেসে রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু তারা পরিবারের কথা কোনোদিনও ভাবেননি। আবার তাদের সন্তানরাও এটা সাথে খাপখাইয়ে চলতে পারে না। হয়ত তারা যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। যার কারণে তাদের ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি নাই।

দলটির শীর্ষ আইনজীবী নেতা জয়নুল আবেদীন বলছেন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার করে রাজনীতি করা কঠিন করে তুলেছে আওয়ামী লীগ। পর্যায়ক্রমে সব নেতাকর্মীদের মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
নেতাকর্মীদের মুক্তি নিয়ে কথা বলছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। ছবি: সময় সংবাদ

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন,

আস্তে আস্তে সকলেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে বের হয়ে আসছেন। আমরা আশা করি, সহসাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা সকলকে বের করতে পারব। এখন সময় আছে, শাসক দলের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অহেতুক অত্যাচার বন্ধ করে আবার তাদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া।

দলটির হিসেবে ২৮ অক্টোবরের পর সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুরনো মামলায় সাজা হয় অন্তত আড়াই হাজার নেতাকর্মীর। আইনি পথে তাদের সাময়িক স্বস্তি দেয়া গেলেও নেতাকর্মীদের আর্থিক ও পারিবারিক, মানসিক বিপর্যয় কাটাতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে মনে করেন নেতারা।

সর্বশেষ খবর