Homeসর্বশেষ সংবাদঅবৈধ বালু উত্তোলনে দায় নিচ্ছে না প্রশাসন

অবৈধ বালু উত্তোলনে দায় নিচ্ছে না প্রশাসন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।

বগুড়ার শেরপুরে বাঙ্গালী নদী থেকে কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এর ফলে বর্ষাকালে ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে আবাদী জমি। এলাকাবাসীর দবির মুখে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। বগুড়ার পানি উন্নয় বোর্ড ও দায়িত্ব প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেছেন বিষয়টি অবৈধ। কিন্তু বৈধতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। কেউ কারও দায় নিতে চাচ্ছেন না। আর এরই ফাঁকে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শতশত ট্রাক বালু।

সারেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়েনের বড়ইতলী এলকার বাঙ্গালী নদীর তীরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু। এস্কেভেটর দিয়ে সেগুলো ট্রাকে ভরে গ্রামীন সড়ক নষ্ট করে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এলাকার বেশ কিছু মানুষ জানান মোন্নাফ চৌধুরী, শাহিদুল ইসলাম, বক্কার আলী ও চার্লী সরকারসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই কাজের সাথে যুক্ত। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে তাদের আবাদী জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ভারি ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামেরে রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দিনরাত শব্দ ও বায়ুদূষণ তো আছেই। এর প্রতিকার চেয়ে তারা গণস্বাক্ষরসহ বগুড়া জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারী তারা মানবন্ধনও করেছেন। কিন্তু কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি। উপরন্তু গত একমাস আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। এখন তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

নদীর তীরে দেখা মেলে বালু উত্তোলনকারীদের একজন মোন্নাফ চৌধুরীর। তিনি বলেন, বাঙ্গালী-করতোয়া-ফুলজোর-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তারা নদী খনন করছেন। এই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। তাদের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়েছে সিরাজগঞ্জের এনআর এন্টারপ্রাইজ নামক আরেকটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই তারা স্থানীয়ভাবে কার্যাদেশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নদী থেকে বালু তুলছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেই বালু বিক্রি করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর অনুমোদনের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী। গত ২৩ মার্চ তিনি জানিয়েছেন, বালু উত্তোলনকারীরা সেনাবাহিনীর লোকজনসহ তার দপ্তরে এসে অনুমোদনের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে সরকারি নকশা অনুযায়ি নদী খনন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি তারা তদারকি করবেন।

কিন্তু ভিন্নকথা জানিয়েছেন বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ১৯ মার্চ জেলা প্রশাসকের সম্বয় সভায় শেরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বড়ই তলী এলকায় বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর অনুমোদন থাক বা না থাক সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কারণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ি সুয়িং ড্রেজার ও এস্কেভটর দিয়ে নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী নদী খনন করতে হবে। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু একটি জায়গায় স্তুপ করে রেখে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর সেগুলোর অর্ধেক পাবে জমির মালিক। বাকি বালু নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু সেখানে অবৈধভাবে বাংলা ড্রেজিং ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। তাকে এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। এমনিক প্রকল্পের দয়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিলো যোগাযোগ করার জন্য।

এই প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে আছেন সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট রাব্বি। তিনি নিশ্চিত করেছেন শেরপুরের বড়ইতলী এলাকায় নদী খননের নামে বালু উত্তোলনে তাদের অনুমোদন নেই। সেনাবাহিনীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় দায় নিতে অপারগতা প্রকাশ করছে স্থানীয় প্রশাসন। শেরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এসএম রেজাউল করিম বলেন, নদী খননের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সেখানে সেনাবাহিনীর সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোরই দায়িত্ব। বর্তমানে ইউএনও স্যার ছুটিতে আছেন। তিনি আসলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

সর্বশেষ খবর

Exit mobile version