Homeজেলাশাজাহানপুরে সরকারি প্রকল্পে নয় ছয়

শাজাহানপুরে সরকারি প্রকল্পে নয় ছয়

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।

বগুড়ার শাজাহানপুরে সরকারি প্রকল্পে বিতরণ করা হয়েছে নকল পন্য। আবার তাদের ক্রয়মূল্যও দেখানো হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি। এভাবে একদিকে যেমন সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অন্যদিকে জগণের সাথে কারা হয়েছে প্রতারণা। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের এমন কর্মাকান্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকার জনগণ।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত খেলার বল, জার্সি এবং ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ দেখানো হয়েছে মোট ১৩ লক্ষ ৫০হাজার টাকার। ৬নাম্বার সাইজের টিউবওয়েল, পাইপ সহ বিতরণ দেখানো হয়েছে ৩৭লক্ষ টাকা। মেশিন বিতরণ দেখানো হয়েছে ৩২লক্ষ ৩৪হাজার ৫শত ২১ টাকা ও ১৬লক্ষ ৭৯হাজার ৫শত ২১টাকার ৫৬ইঞ্চি সিলিং ফ্যান। প্রতিটা ফুটবলের মূল্য ধরা করা আছে ৬শত ৫০টাকা। ভলিবলের জন্য ৭শত ৫০টাকা। আর ব্যাট, স্ট্যাম্প, হেলমেট, গ্লোভস এর দাম লেখা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিটা টিউবওয়েলের দাম ৩১শত ৫০টাকা, প্রতিটি ফ্যানের দাম ৩হাজার ৪শত টাকা ও স্ট্যান্ডসহ প্রতিটা সেলাই মেশিন এর দাম ৯ হাজার ৪৪ টাকা ধরা হয়েছে।

তবে প্রকল্পের নির্ধারিত ও বাজার মূল্যের সাথে অনেক ফারাক। এছাড়া সরবরাহকৃত পণ্যগুলো নকল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা।

বগুড়া শহরের খেলার সামগ্রী বিক্রয় করেন এমন ব্যবসায়ীরা বলেন, বরাদ্ধে সরবরাহ করা বল গুলো নকল এবং নিম্নমানের। প্রকল্পে সরবরাহ করা ফুটবল তারা প্রতিটি ৩শ টাকায় পাইকারী বিক্রি করনে। ভলিবল বিক্রি করেন ৪শ ৫০টাকায়। সরবরাহ করা ওই ক্রিকেট ব্যাটগুলোও নিম্ন মানের। এর চেয়ে ভালো ব্যাট তারা প্রতিটি ২শ টাকায় বিক্রি করনে। ২হাজার টাকার মধ্যে ভালো ক্রিকেট সেট বিক্রি করি।

বগুড়ায় টিউবওয়েল প্রস্তুত করেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সথে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পের টিউবওয়েল গুলোর ৩১শ ৫০ টাকা ধরা হলেও বাজারে এদের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬শ টাকার বেশি না। তবে ক্রেতাদের অনুরোধে অনেক সময় অতিরিক্ত দাম লিখতে হয়।

সরবরাহকৃত সেলাই মেশিন ও ফ্যানগুলোও নকল বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়িরা। ৯ হাজার টাকার সেলাই মেশিন সাড়ে ৫ হাজার টাকা ও সাড়ে ৩ হাজার টাকার ফ্যান বাজারে আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যায় বলে তারা জানিয়েছেন।

প্রকল্পের এই সময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু, ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেফাজত আরা মীরা।

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু বলেন, “আমি এই প্রকল্পগুলোতে আমি মাত্র এক লক্ষ ৫০হাজার টাকার বলের দায়িত্ব নিয়েছি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাকি প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যয় করেছেন।”
উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেফাজত আরা মীরার মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেন নাই।

শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদ বলেন, “আমি ভাইস চেয়ারম্যান। তাই এমন কোন বরাদ্দ পাইনাই যা দিয়ে জনসেবা করতে পারি। সেখান থেকে অনিয়ম করার প্রশ্নই আসেনা।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য শাজাহানপুর উপজেলা প্রকৌশলী মূহ ফারুখ হাসান এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি দীলিপ কুমার চৌধুরী বলেন, সরকারের টাকায় নকল পণ্য ক্রয় করা মানে, নকলকারীদের উৎসাহিত করা। এতে সরকারের বদনাম হয়। ঘটনা সত্য হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহসিয়া তাবাসসুম বলেন, সুবিধাভোগীরা পণ্যের গুণগত মান নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর