সহিংস বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রশংসা করেছন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর। প্রতিবেশী দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ নয় বলেও তিনি জানান। সোমবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কীভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে? এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘আমাদের মৌলিক স্বার্থ বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে নিহিত।
আমাদের মৌলিক প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গল করা এরপর দ্বীতিয় রাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে যেকোনো স্বতন্ত্র নেতার অবস্থান।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছি। আমরা ১৯৭১ সালেও তাদের সঙ্গে ছিলাম। সব পরিস্থিতিতেই তাদের সঙ্গে ছিলাম।এমনকি যখন তাদের সরকার আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না, তখনও আমাদের সম্পর্ককে ধরে রাখতে পেরেছি। অবশ্যই ভবিষ্যতে সেই সম্পর্কের কোনো অবনতি হওয়া উচিত নয়।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ নয়। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি।তিনি অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব। আমি মনে করি তাকে জামাত-ই-ইসলামি বা পাকিস্তানি আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে না দেখে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ বলে দেখা উচিত। আপনি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামগ্রিক গঠনের দিকে তাকান, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে ভারতের কোনো উদ্বেগ বোধ করার কোনও বিশেষ কারণ নেই বলে মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, তিনি বলেন, ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ সর্বদাই ছিল পাকিস্তান ও চীন সমস্যাযুক্ত এই পরিস্থিতিতে কোনও কিছু অর্জন করবে কিনা। তার ভাষায়, ‘এই ধরনের প্রেক্ষাপটে সর্বদা একটি সম্ভাবনা থাকে যে, আন্দোলনের সময় সহিংসতার কিছু আপত্তিকর ঘটনায় পাকিস্তানি আইএসআইয়ের হাত থাকতে পারে, চীনারাও বাংলাদেশে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতিকে আরও সম্প্রসারণের সুযোগ হিসাবে দেখতে পারে।উপমহাদেশের মানুষ তাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বা ড. ইউনূসের প্রাথমিক বিবৃতিতে আমাদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।’ তিনি শান্তি ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য অন্তর্বর্তী নেতার কথা স্মরণ করে এ কথা বলেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। এ বিষয়ে থারুর নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি তাকে সাহায্য না করতাম, তাহলে এটা ভারতের জন্য অসম্মানজনক হত। আমাদের বন্ধুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে কেউ আমাদের বন্ধু হতে চাইত না। শেখ হাসিনা ভারতের বন্ধু এবং ভারত তার বন্ধু। এবং যখন একজন বন্ধু সমস্যায় পড়েছে, আপনি তাদের সাহায্য করার আগে, তাকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে দুবার ভাববেন না। ভারত ঠিক সেটাই করেছে। এটা করার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। সরকার তাকে (হাসিনাকে) এখানে নিয়ে আসার এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক কাজ করেছে।’
থারুর আরো বলেন, ‘তিনি কত সময় ভারতে থাকতে চান তা আমাদের বিষয় নয়। আপনার বাড়িতে যে আছেন তাকে নিশ্চই আপনি ফোন করে জিজ্ঞাসা করবেন না যে, আপনি কখন চলে যাচ্ছেন? আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, অপেক্ষা করুন এবং দেখুন, অন্য কোথাও যাওয়ার আগে তিনি এখানে কতক্ষণ থাকতে চান। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার আগে বাস্তবিক কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে, ভিসা সংক্রান্ত বিষয় দেখতে হবে। তবে আপাতত, তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত যে, আমরা এমন সময়ে একজন বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছি যে সময়টিতে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগ আরো জোরদার করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন আসছে। অবশ্যই কিছু হামলা হয়েছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, কারোরই অস্বীকার করা উচিত নয়। এটা একটা সত্য। একই সঙ্গে এমন গল্পও বেরিয়ে আসছে যে বাংলাদেশী মুসলমানরা হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে। তাই অনেক খারাপ খবরের সময়ও কিছুটা ভাল খবর পাওয়া গেছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে আশার আলো দেখেছিলেন কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূসের বিবৃতিতে সরকার সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণকে শান্ত হতে এবং সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে, এটি খুব ভালো লক্ষণ। যে কোনো অবিরাম সহিংসতায় যারা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতবিরোধী, হিন্দু বিরোধী তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করবে। ফলে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার সুযোগ নিবে অনেকে। তবে আমার বিশ্বাস আপাতত অনেকই এই পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে চায় না।’
চাকরির কোটা নিয়ে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভে ৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হওয়ার পর গত সোমবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি এখন প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে রয়েছেন। ভারতে যাওয়ার পর দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেন। সেখানে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের পরিস্থিতি এবং সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। এই সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে ভারতের বিরোধী দলগুলো।