Homeবিবিধনা ফেরার দেশে চলে গেছেন জাকারিয়া পিন্টু

না ফেরার দেশে চলে গেছেন জাকারিয়া পিন্টু

শাইমুর রেজা মন্ময়।।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই অধিনায়ক রাজধানীর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বাংলাদেশের অভ্যুত্থনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের একটা অধ্যায় রেখে গেলেন এই কিংবদন্তি।

সময়টা আজ থেকে ৫৩ বছর আগের। বাংলাদেশের তখন চলছে জন্মের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধের সেই টালমাটাল দিনেই দেশের ক্রীড়া ইতিহাস আশ্চর্য এক মোড় নেয়। পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে খেলতে নামে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের একদল দুঃসাহসী যুবক। ভারতের মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবল দল প্রথম ফুটবল ম্যাটি খেলতে নামে নদীয়া জেলা ক্রীড়া সমিতি দলের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি ও তহবিল গড়ার জন্য এই ফুটবল যোদ্ধারা ভিনদেশে একের পর এক ফুটবল ম্যাচ খেলা শুরু করে। আর যে টাকা সংগ্রহ হয়, তা জমা দেয় মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে।

স্বাধীন বাংলার এই ফুটবল দলেরই অধিনায়ক ছিলেন আজ না ফেরার দেশে চলে যাওয়া জাকারিয়া পিন্টু। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ধরা হতো জাকারিয়া পিন্টু।স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি একাদশের বিপক্ষে মুজিবনগর একাদশের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। ওই বছরই একই মাঠে কলকাতার মোহনবাগানের বিপক্ষে প্রদর্শনী ম্যাচে বাংলাদেশের নির্বাচিত একাদশের অধিনায়ক। আসামের গুয়াহাটিতে সর্বভারতীয় লোকপ্রিয় বরদুলই কাপে ঢাকা একাদশেরও অধিনায়ক। জীবনে কত ম্যাচে যে অধিনায়কের বাহুবন্ধনী পরেছেন, সেই হিসাব নিজের কাছেও ছিল না। ১৯৫৭–এর দিকে যখন জগন্নাথ কলেজে কলেজে পড়েন, তখনো দুই বছর কলেজটির অধিনায়ক ছিলেন। তাঁকে ‘আজন্ম অধিনায়ক’ বলাই যায়।

পরবর্তীতে বিজয় অর্জিত হলে মুক্ত বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল দল গঠন করা হয় ১৯৭৩ সালে। সেই দলেরও অধিনায়ক ছিলেন পিন্টু।স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সেই সময় মোট কয়টি ম্যাচ খেলেছিল তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন ১৩টি, কারো কারো মতে আবার সংখ্যাটা ১৬। সেই ম্যাচগুলো থেকে ঠিক কত টাকা মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দেয়া হয় তা নিয়েও দুই রকমের তথ্য শোনা যায়। কোথাও লেখা ১৬ লাখ, কোথাও আবার ৫ লাখ।

পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি। ১৯৭১ সালের জুন মাসে দলটি গঠন করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনের কথা উল্লেখ করে মুজবনগরে গিয়ে তাতে যোগ দিতে বলা হয়। মুজিবনগরে একে একে উপস্থিত হন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলী ইমামরা। এরপর সেখান থেকে আকাশবাণীতে (কলকাতা রেডিও) ঘোষণা দেয়া হলো বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত খেলোয়াড়দের মুজিবনগরে রিপোর্ট করার জন্য।

সর্বশেষ খবর