Homeঅর্থ-বাণিজ্যরোজার আগে বেড়েই চলছে সয়াবিন তেল ও ছোলার দাম

রোজার আগে বেড়েই চলছে সয়াবিন তেল ও ছোলার দাম

রমজান আসতে মাত্র এক মাস বাকি, আর এর আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে সয়াবিন তেল ও ছোলার বাজারে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম একাধিকবার বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে ১৭৪ থেকে ১৭৫ টাকা হয়েছে। এক মাস আগে যা ১৬৩ থেকে ১৬৬ টাকার মধ্যে ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও খোলা তেলের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, রমজানের সময় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কঠোর নজরদারি করলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানের আগেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সয়াবিন তেলের বাজার পরিস্থিতি

বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, তারা চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না। কোম্পানিগুলো ঠিকমতো তেল সরবরাহ করছে না, ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। ডিলাররা পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার করলেও এক থেকে দুই কার্টন পাচ্ছেন বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল থাকার পরও দেশে সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বেড়েছে। তবে মিলাররা বলছেন, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। অন্যদিকে, পাম অয়েলের চাহিদা কম থাকায় এর দাম কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে সরকার নতুন ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৬৭ থেকে বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়। তবে বর্তমানে বাজারে এসব পণ্যের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি বিক্রি হচ্ছে।

ছোলার দামও ঊর্ধ্বমুখী

রমজানে ইফতারের অন্যতম প্রধান উপকরণ ছোলার দামও বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি ছোলা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ১১৫ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল। অথচ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোলার পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং আমদানির ঘাটতিও নেই।

প্রতি বছর দেশে ছোলার চাহিদা থাকে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানের সময় চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন থাকে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৯৮০ টন ছোলা আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, আমদানির জন্য ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ টন ছোলার এলসি খোলা হয়েছে এবং পাইপলাইনে রয়েছে আরও ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৯১ টন ছোলা। ফলে ছোলার দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

সরকারি উদ্যোগ ও বাজার পরিস্থিতি

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজানের সময় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এফ এম নাজির হোসেন বলেন, শুধু রমজানেই নয়, আগেই বাজারে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। তেল ও ছোলার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়লে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, সরকারের উচিত এখনই কঠোর মনিটরিং চালু করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

কিছু পণ্যের দাম কমেছে

বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমার স্বস্তিও রয়েছে। বিশেষ করে আলুর দাম এক মাসের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে আলু প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে।

সবজির বাজারে বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

রমজানের আগে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই সরকারকে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ভোক্তারা ন্যায্য মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন।

সর্বশেষ খবর