Homeজেলাভারত হঠাৎ তিস্তার পানি ছাড়ল, তিস্তা পাড়ে ক্ষতি ও আন্দোলনের আশঙ্কা: কি...

ভারত হঠাৎ তিস্তার পানি ছাড়ল, তিস্তা পাড়ে ক্ষতি ও আন্দোলনের আশঙ্কা: কি ঘটছে?

বাংলাদেশের তিস্তা নদী নিয়ে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে, যখন ভারত সরকার হঠাৎ করে তিস্তার পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তিস্তা পাড়ের মানুষদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে কৃষকদের জন্য এটি এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপের পিছনে অনেকেই কৌশল বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন, যা তিস্তা পাড়ের আসন্ন আন্দোলন বা অবস্থান কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা হতে পারে।

তিস্তা নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নদী, যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রবাহিত। ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মাধ্যমে প্রবাহিত হওয়া এই নদীটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কৃষিকাজের জন্য পানি সরবরাহ করে থাকে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, এবং এ বিষয়ে একটি স্থায়ী চুক্তি প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি।

তবে, এবারের পানি ছাড়ার ঘটনায় তিস্তা পাড়ের কৃষকরা উদ্বিগ্ন। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, এবং সন্ধ্যা ৬টায় এটি ৫০ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়—যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই পানি বৃদ্ধির জন্য ভারত থেকে পানি ছাড়াকে দায়ী করেছে, তবে এটি কতটুকু বৃদ্ধি পাবে, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

পানি বৃদ্ধির ফলে, তিস্তা পাড়ের কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, বিশেষ করে যারা জেগে ওঠা বালুচরে ফসল উৎপাদন করছেন, তাদের ফসল তলিয়ে যেতে পারে। রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ডাল-বাদাম সহ নানা ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা জাগিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন ও তিস্তা পাড়ের মানুষের পক্ষ থেকে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, “তিস্তার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি শুনেছি। তবে, তিস্তা পাড়ে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।” তিনি আরও বলেন, ভারতের পানি ছাড়ার সিদ্ধান্তকে আন্দোলনকে ঠেকানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত উঠছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভারত তিস্তার পানি ছাড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে এক ধরণের রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে, বিশেষত যখন তিস্তা পাড়ের মানুষ বড় আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অন্যদিকে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, এটি একটি রুটিন পানি সরবরাহের অংশ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, পানি বৃদ্ধি ও তিস্তার পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনও কোনো স্থায়ী চুক্তি না হওয়ায়, বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তিস্তা নদী নিয়ে বাংলাদেশের কৃষকরা দিনের পর দিন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন, এবং এটি তাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই নতুন পরিস্থিতিতে, তিস্তা পাড়ের আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে এবং সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।

সর্বশেষ খবর