গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (১২ মার্চ) হোয়াইট হাউসে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এমন ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, গাজা থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হবে না।
এদিকে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে কাতারের দোহায় হামাসের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। ওই বৈঠকে উইটকফের কাছে গাজার জন্য মিশরের দেয়া পুনর্গঠন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে পাঁচ আরব দেশ।
এদিকে গাজায় ইসরাইলের অবরোধ ১২ দিনে গড়িয়েছে। ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ বন্ধ থাকায় উপত্যকাজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট।
হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করতে কিছুদিন আগে গাজায় ত্রাণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। এর জেরে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। তবে বরাবরের মতোই আন্তর্জাত্কি আহ্বান উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী অটল থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন গাজাবাসী।
উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় মিশর সীমান্তে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে আছে। আর এতে গাজাজুড়ে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে কিছু না খেয়েই রোজা রাখছেন অনেক ফিলিস্তিনি।
ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ থাকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে উপত্যকায় আবারো চরম মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ গোষ্ঠী গাজায় প্রবেশকারী ত্রাণের ওপর ইসরাইলি অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ফের ইসরাইলি জাহাজে সামরিক অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে ইয়েমেনের হুতি যোদ্ধারা। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরাইলকে সময় বেঁধে দিয়েছিল এর যোদ্ধারা।
সেই সময়সীমা শেষ হলেও ইসরাইলের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বুধবার উপকূলীয় অঞ্চলে ইসরাইলি জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে আবার সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়।
এর মধ্যেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। দখলদার দেশটির হামলায় শিশুসহ আরও অন্তত আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকে আহত হয়েছে। বুধবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরাইলের হামলা জোরদার হয়েছে এবং এতে এক শিশুসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজা শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে নেটজারিম এলাকায় একদল ফিলিস্তিনি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির কাছে জড়ো হওয়ার পর একটি ইসরাইলি ড্রোন তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের পূর্বে অবস্থিত শোকা গ্রামে আরেকটি ড্রোন হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নারী নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইসরাইলি সেনাবাহিনীও ওই এলাকার ফিলিস্তিনি বাড়িগুলোয় গুলিবর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে অবস্থানরত সেনারা মধ্য গাজার দক্ষিণ-পূর্ব দেইর আল-বালাহর একটি অঞ্চলে সরাসরি গুলি চালালে একটি শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।