শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি।।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় সাংবাদিক পরিচয়ে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেক আইডি খুলে মানুষের চরিত্র হনন, বাল্যবিয়ের অভিযোগে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি এবং হোটেলে খেয়ে বিল না দেওয়ার মতো অপরাধের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে এই সংঘবদ্ধ চক্র।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ফেক আইডির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানহানি করা হচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে এবং আদায়ও করা হচ্ছে। একেক জন একেক পোর্টাল, পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের নাম ব্যবহার করছে, যা আগে কখনো শোনা যায়নি। এই চক্রের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা অপপ্রচার চালিয়ে দেয়, যাতে সম্মানহানি হয়।
গত ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার নয়মাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাজ হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক পরিচয়ে খেয়ে বিল না দেওয়ায় এক ব্যক্তি লাঞ্ছিত হন। লাঞ্ছিত ব্যক্তি হলেন শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের নগর জোয়ারদারপাড়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে রেজওয়ানুল হক শাহিন (৩৫)। তিনি নিজেকে জাতীয় দৈনিক “নাগরিক ভাবনা” পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি এবং “আমার প্রাণের বাংলাদেশ” পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) হিসেবে পরিচয় দেন।
লাঞ্চিত হওয়ার পর শাহিন নিজেই ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ শাহিনকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিলে সেটিও ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজওয়ানুল হক শাহিন শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট ও বগুড়া শহরের কয়েকজনকে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেছেন। এই চক্রের সদস্যরা দোকানে খেয়ে বিল না দেওয়া, বাল্যবিয়ের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মোটরসাইকেলের তেল ও মিষ্টির নামে চাঁদা তোলা এবং ফেসবুকে সম্মানহানিকর পোস্ট দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মতো নানা অপরাধ করে আসছে।
তাজ হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. তাজুল ইসলাম বেলাল জানান, সাংবাদিক পরিচয়ে রেজওয়ানুল হক শাহিন প্রায়ই তার হোটেলে খেয়ে টাকা দিতেন না। ১১ মার্চ রাতে তিনি হোটেলে না থাকায় কর্মচারীদের টাকা ছাড়া খাবার না দিতে নিষেধ করেছিলেন। সেই রাতে শাহিন এসে আবার খেতে চাইলে কর্মচারীরা টাকা চান। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগালি করেন। পরে ফেসবুকে “হাইওয়ে হোটেলগুলোতে মাদক ব্যবসা হয়” বলে পোস্ট দেন, যা তার সম্মানহানি করেছে।
ভলকানাইজিং ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন বলেন, রেজওয়ানুল হক শাহিন ও শিবলু নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে তার দোকানে আসেন এবং মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। সাংবাদিকরা আসলে টাকা দিতে হয়, এমন কথাও বলেন। বাধ্য হয়ে তিনি কিছু টাকা দিয়েছিলেন।
আমরুল ইউনিয়নের আমিনবাজার এলাকার কীটনাশক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক মাস আগে শাহিন ও তার সহযোগীরা তার দোকানে এসে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি সময় চাইলেও তারা ফোন দিয়ে ভয় দেখাতে থাকেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি টাকা দেননি।
রেজওয়ানুল হক শাহিন শাজাহানপুরের একটি বিদ্যালয়ে মালি পদে চাকরি করতেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শাহিন এসএসসি পাস করা একজন ব্যক্তি। তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে স্কুলে কাজ করতেন, কিন্তু খারাপ আচরণের কারণে দুই বছর আগে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
রেজওয়ানুল হক শাহিন মোবাইল ফোনে বলেন, তিনি দৈনিক নাগরিক ভাবনা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তাজ হাইওয়ে হোটেলের মালিক তাকে ভুল বুঝে মেরেছেন। তিনি হোটেলের নাম উল্লেখ করে কোনো পোস্ট দেননি।
যখন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি বলেন, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং পরে কথা বলবেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং কখনো খোলা থাকলেও কল রিসিভ করছেন না।
শাজাহানপুরসহ আশপাশের এলাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনা বাড়ছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকলে এ ধরনের অপরাধ আরও বিস্তৃত হতে পারে। ভুক্তভোগীরা এ চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।