কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় পরকীয়ার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর এক গ্রাম পুলিশ সদস্যকে জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টা থেকে সোন্দাহ বাজারের টাওয়ার মার্কেটের একটি দোকানে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সালিশ হয়। সালিশে অভিযোগ ওঠে, গ্রাম পুলিশ সুশান্ত চন্দ্র দাসের সঙ্গে দুই সন্তানের এক নারীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। ফোনকলের অডিও শোনার পর সালিশি বৈঠকে ওই নারীকে তালাক দেন তার স্বামী। এরপর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে সুশান্তের গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে গ্রাম ঘোরায় এবং বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
সালিশে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মাতব্বর শামীম রেজা ও আবু তালহা রাসেলসহ অনেকে। অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশের নাম শ্রী সুশান্ত চন্দ্র দাস। তিনি সোন্দাহ দাসপাড়া এলাকার মৃত অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে এবং নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ।
সুশান্ত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল, মাঝে মাঝে তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করতাম। তবে আমাদের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। তবুও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি আমাকে ধরে নিয়ে সালিশ বসান। সেখানে কাজী ডেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বামী-স্ত্রীর তালাক সম্পন্ন করা হয়। পরে আমার কাছেও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে জুতার মালা পরিয়ে আমাকে বাড়ি পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়িতে পূজা চলছিল, তাই ইউএনও, ওসি কিংবা চেয়ারম্যানকে জানাতে পারিনি। তবে আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, সুশান্ত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে এর আগেও নারীদের সঙ্গে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ ছিল। এবার ফোন রেকর্ডে প্রমাণ মিলেছে বলেও দাবি করেন তারা।
অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় মাতব্বর আবু তালহা রাসেল বলেন, ‘আইন হাতে তুলে নেয়া হয়নি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে জনতার রোষ থেকে বাঁচাতে টেকনিক হিসেবে তার গলায় জুতার মালা পরানো হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হওয়া স্বামী-স্ত্রীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম খোকন বলেন, ‘আমি তখন উপজেলার বাইরে ছিলাম। দুপুরে জানতে পারি কয়েকজন গ্রাম পুলিশকে আটক রাখা হয়েছে। আমি তখন পুলিশে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ঘটনা যাই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া উচিত হয়নি।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’