পাবনা শহরের প্রবেশমুখে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বিশাল এক ময়লার স্তূপ, যা এখন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও পথচারীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এসব আবর্জনা নিয়মিত অপসারণ না হওয়ায় তা এখন নগরবাসীর নিত্যকার ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে পাবনা টার্মিনাল থেকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) দিকে যাওয়ার প্রধান সড়কের পাশেই এই স্তূপটি পড়েছে চোখে। প্রতিদিন এই পথে চলাচল করেন প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পথচারী এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি পাবিপ্রবি শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই দিনে একাধিকবার এই পথ ব্যবহার করেন। মাত্র ৫০ মিটার দূরেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে আবাসিক বসতি। ফলে দুর্গন্ধ, ধোঁয়া ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই এলাকাটি আসলে একপ্রকার ‘অঘোষিত ডাস্টবিনে’ পরিণত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন এখানে ময়লা-আবর্জনা এনে ফেলা হয়। শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে এসব আবর্জনার মধ্যে জমে থাকা প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়, যার ফলে ছড়ায় ভয়াবহ ধোঁয়া ও বিষাক্ত গন্ধ। এতে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালাসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার দোকান এই রাস্তার পাশেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দুর্গন্ধ আর ধোঁয়ার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আমাদের মতো অনেকেই এর ভুক্তভোগী। অথচ কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এরকম চলতে থাকলে সবকিছু গুছিয়ে এখান থেকে চলে যেতে হবে।”
পাবিপ্রবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী বিষ্ণু কুমার ঘোষ বলেন, “শহরের মূল প্রবেশপথে এমন একটি বিশাল আবর্জনার স্তূপ রাখা খুবই দুঃখজনক। একদিকে রাস্তার পাশ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে, অন্যদিকে এখানেই শহরের সব ময়লা এনে ফেলা হচ্ছে। কোনো নিয়ম না মেনে প্লাস্টিক পোড়ানো হচ্ছে, এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্ট হয় আমাদের শিক্ষার্থীদের ও পাশের স্কুলের কোমলমতি শিশুদের।”
পরিবেশবিদ ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খোন্দকার আরিফুজ্জামান বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই দুর্বলতা শহরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে আবর্জনা ফেলা এবং প্লাস্টিক পোড়ানো শুধু মানুষকে ভোগান্তিতেই ফেলছে না, বরং বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পারিপার্শ্বিক বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলছে। এর ফলে বিভিন্ন ভারি ধাতু বা সীসা মাটি, পানি ও বায়ুর সঙ্গে মিশে দূষিত হয়ে যায়, ফলে শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যেহেতু ওখানে অর্ধ-শুকনা আবর্জনা পোড়ানো হয়, সেহেতু সেখানে সমস্ত উপাদান পুড়তে না পেরে অসম্পূর্ণ কার্বন মনোঅক্সাইড তৈরি করে এবং এর প্রভাবে মানুষ মারা যেতে পারে। এছাড়াও Volatile Organic Compound (VOC) জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ যা সহজেই বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুতে মিশে যায়, এর ফলে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা পৌরসভার প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমি সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছি। ইতোমধ্যেই একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, এটি শেষ হলে সমস্যার সমাধান হবে।”
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এই অস্থায়ী বর্জ্য স্তূপটি যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করে শহরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা উচিত। নইলে এই জনবহুল এলাকায় পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।