বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন জাফর ইকবাল। ষাটের দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের শুরু পর্যন্ত ঢাকাই সিনেমাকে যারা জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। রোমান্টিক নায়ক হিসেবেই বেশি পরিচিত হলেও, জাফর ইকবাল ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট এবং একজন অসাধারণ পারফর্মার। কিন্তু জীবনের শেষ ভাগটা ছিল তার জন্য কষ্টকর এবং নীরব।
১৯৯০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান তিনি। শরীরিক অসুস্থতা আর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঝড় তার জীবনকে স্থবির করে তোলে। বিশেষ করে ক্যানসারের করাল গ্রাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ভুগেছেন। চিকিৎসার জন্য পরিবার ও সহকর্মীরা চেষ্টা করলেও শেষমেষ ১৯৯২ সালের ৮ এপ্রিল, মাত্র ৪১ বছর বয়সে, ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহানায়ক।
https://youtu.be/1VNB4yKdWIU
তার জীবনের শেষ সময়গুলোতে বন্ধু, সহকর্মী এবং ভক্তরা পাশে থাকলেও, চিরকালীন রূপালি পর্দার নায়ক তখন একান্তই নিজের লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যেও নিজের সুর আর ছন্দ হারাননি তিনি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেও তার হাসি ও সাহস ভঙ্গ হয়নি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আশাবাদী ছিলেন ফিরে আসার।
জাফর ইকবাল তার অভিনীত অসংখ্য জনপ্রিয় ছবির মাধ্যমে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। “ডাক দিয়ে যায়,” “আবার তোরা মানুষ হ,” “ভাত দে,” “ভয়ংকর নগরী”সহ অনেক ছবিতে তার অনবদ্য অভিনয় বাংলা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
তার অকালপ্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র হারিয়েছিল এক প্রাণবন্ত নায়ককে, যিনি শুধু অভিনয়েই নয়, ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন মানবিক ও প্রেরণাদায়ক। আজও বাংলা সিনেমার দর্শকরা গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করেন কিংবদন্তি জাফর ইকবালকে, যার জীবনাবসান ছিল মঞ্চের শেষ নীরব প্রদীপ নিভে যাওয়ার মতো।