লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ৮ নম্বর দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের টুনার চরে এখন এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম—নাসির সর্দার (৫৮)। অভিযোগ উঠেছে, ভোলা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্ডেবপুর গ্রামের বাসিন্দা এই ব্যক্তি টুনার চরে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষদের জিম্মি করে রেখেছেন। নিজ জেলা ভোলা থেকে ট্রলারে করে লোকজন এনে দেশীয় অস্ত্রসহ সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়, গরু-ছাগল লুট, এমনকি শারীরিক হামলার মতো অপরাধে জড়িত তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসির সর্দারের ছেলে রাসেল নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে আরও ভয়াবহ রূপে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত নাসির সর্দার, দলীয় প্রভাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এলাকাবাসীর উপর চালিয়ে যাচ্ছেন ত্রাসের রাজত্ব।
গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে টুনার চর গ্রামের রুনা বেগম (৪৪), স্বামী আব্দুল জলিল, নাসির সর্দারের হামলায় গুরুতর আহত হন। তার চোখে আঘাত লাগায় বর্তমানে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানান। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৭ মে তারিখে স্থানীয়রা মানববন্ধনের আয়োজন করলেও, নাসির সর্দারের হুমকির মুখে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নাসির সর্দার প্রায়শই সাধারণ মানুষের ঘরে গিয়ে জোর করে টাকা আদায় করে থাকেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের উপর চলে শারীরিক নির্যাতন। এমনকি নারীদের উপরও নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এলাকার মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস আজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত।
মো. কামাল বেপারী নামের একজন বলেন, আমার দুটি গরুসহ সাতটি গরু জোর করে ট্রলারে তুলে নিয়ে গেছে। চাঁদা না দিলে আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। থানায় যেতে ভয় পাই। সে নদীতে ডাকাতি করে লুট করা ট্রলার এনে রাখে চরে। কিছুদিন আগে হাকিম আলী বাজারে একটি নৌকা এনে রেখেছে। তা এখনো ওখানেই রয়েছে। কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
স্থানীয়দের জোর দাবি—নাসির সর্দার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এলাকার সাধারণ মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ জীবন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ। অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও সে যেন আইনের ঊর্ধ্বে না থাকে—এটাই সময়ের দাবি।
টুনার চরের বর্তমান পরিস্থিতি শুধু মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি একটি চর এলাকার সমস্যা নয়, এটি গোটা সমাজে আইনের শাসনের প্রশ্ন তুলে দেয়। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান—অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, যেন মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে।