Homeবিশ্বভারতবর্ণাঢ্য আয়োজনে আগরতলায় বিজয় দিবস উদযাপন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে আগরতলায় বিজয় দিবস উদযাপন

দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন ও যথাযোগ্য মর্যাদায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন।

শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দিন নানা কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ দূতালয়। এ দিন সকাল সাড়ে ৭টায় দূতালয় প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করা হয়। পরে ৮টা ১০ মিনিটে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শাহাদাৎ বরণকারী সব সদস্যসহ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শহীদদের স্মরণে নবনির্মিত অ্যালবার্ট এক্কা ওয়ার মেমোরিয়ালে সহকারী হাই কমিশনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ১০টায় ত্রিপুরার জনগণের পক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ত্রিপুরা বিধান সভার স্পিকার রতন চক্রবর্তী এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শংকর দে, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্যামল চৌধুরী, স্বপন কুমার ভট্টাচার্যসহ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও স্মৃতিসৌধে অতিথিরা ধারাবাহিকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর রেড শিল্ড ডিভিশনের পক্ষে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নিলেশ চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এ মিশনের প্রথম সচিব মো. আল আমিন।

আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার রতন চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্যামল চৌধুরী ও স্বপন ভট্টাচার্য। আলোচনায় বক্তারা বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় বক্তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রারও প্রশংসা করেন।

সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার সমাপনী বক্তব্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারা ২ লাখ মা-বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তৎকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতীয় সেনাবাহিনী, ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংসহ ত্রিপুরার সর্বস্তরের জনগণকে, যারা নিজেদের সব সামর্থ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক অনবদ্য অবদান রচনা করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে রুপকল্প-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এরইমধ্যে অর্জন করেছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ইতিহাসের সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বিগত বছরগুলোতে, দ্রুত গতিতে বাড়ছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা আজ প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটি গ্রামে শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

গৃহহীন ভূমিহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ৫০ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার হতে ২৮২৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে রোল মডেল। বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ থেকে আগত নৃত্যদল তাদের পেশাদারি পরিবেশনার মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা’সহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশাত্মবোধক বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেছে, যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।

এ মিশনের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মো. রেজাউল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। মহান বিজয় দিবস পালন অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও এমএলএসহ স্থানীয় নেতা, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সিভিল সোসাইটির গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আগরতলা মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত হন। অনুষ্ঠান শেষে দুপুর ১টায় আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর