Homeরাজনীতিমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি থাকলে দূর করা হবে: শেখ হাসিনা

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি থাকলে দূর করা হবে: শেখ হাসিনা

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে বলেও জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবিনশ্বর, জাতির লক্ষ্য অর্জনের পাথেয়। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত ও মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার অপচেষ্টা চলে। জাতির দুর্ভাগ্য যে, এই অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জনগণ বিশেষত তরুণসমাজের মধ্যে প্রচার করা, তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ করা হবে।

এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণ করা, মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের বিকৃতি রোধে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানান তিনি।

*বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা ও অভিযোগ শোনা এবং সমাধানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হটলাইন সার্ভিস চালু করা হবে।

উন্নয়ন অগ্রগতি

১. বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সার্বিক কল্যাণে সরকার নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা পাচ্ছেন।

২. বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও সমন্বয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সমন্বিত তালিকা প্রণয়ন, গেজেট প্রকাশ, সনদ ও প্রত্যয়ন দেয়ার মাধ্যমে সম্মানী ভাতা প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত নীতিমালা/বিধি প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।

৩. শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্প, বীরের কণ্ঠে বীরগাথা শীর্ষক প্রকল্প, পাঠাগার ও জাদুঘর নির্মাণ, সকল জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান।

৪. বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকার স্থলে ২০ হাজার টাকা, বর্তমানে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্যাটাগরি ভেদে ২৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজার পর্যন্ত, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৩০ হাজার এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের পরিবার ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন।

৫.  মুক্তিযোদ্ধারা ২ হাজার টাকা হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা এবং জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে মহান বিজয় দিবস ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

৬.বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা বাবদ বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষায়িত হাসপাতালে জটিল রোগের চিকিৎসা বা জরুরি অপারেশন প্রয়োজন হলে বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃক সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ব্যয় করা যায়।

৭. বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে আবাসন প্রকল্প ‘বীর নিবাস’। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে মোট ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৫ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৮. ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৫২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ডিজিটাল সনদ এবং ৯৫ হাজার ২৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার

১. মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
২. আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং তাঁদের জন্য যেসব কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেগুলো অব্যাহত রাখা হবে। (ক) মাসিক ও উৎসব ভাতা; (খ) দুস্থ ও বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বার্ধক্যকালীন ভরণপোষণ ও বিনা মূল্যে চিকিৎসা; (গ) উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে এসব কল্যাণ কর্মসূচি আরো উন্নত করা হবে।
৩. ষাট ও তদূর্ধ্ব বয়সের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রেল, বাস ও লঞ্চে বিনা মূল্যে চলাচলের সুযোগ অব্যাহত থাকবে।
৪. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সুরক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষত কওমি, ইবতেদায়িসহ সকল মাদ্রাসায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তি এবং পাঠদান নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলবে।

সর্বশেষ খবর