Homeআন্তর্জাতিকভারতকে সেনা সরাতে বলেছে মালদ্বীপ, এরপর কী?

ভারতকে সেনা সরাতে বলেছে মালদ্বীপ, এরপর কী?

ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক এক নতুন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু দুই মাসের মধ্যে সে দেশ থেকে সেনা সদস্যদের সরিয়ে নিতে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছেন।

এটি দুই দেশের সম্পর্ক শীতল হওয়ার শুরু নয়, বরং শীতল সম্পর্কে আরো এক স্তর বরফ জমলো মাত্র। ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন থেকে ফেরার একদিন পর তিনি সেনা প্রত্যাহারে ভারতকে অনুরোধ করলেন এতে করে মালদ্বীপ, ভারতের প্রভাব কমিয়ে চীনের প্রভাব বাড়াচ্ছে বলেই, বিশ্বকে ধারণা দিয়েছে।

সেনা প্রত্যাহারের অনুরোধের বিষয়ে ভারত অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।

ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিলেও, সেনা রাখা বা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে মালদ্বীপের জনগণকে মানবিক ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ভারতের এভিয়েশন প্ল্যাটফর্মগুলো চালু রাখতে কার্যকর সমাধান নিয়ে দুই পক্ষে আলোচনা হয়েছে বলে সেই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

মোহাম্মদ মুইজ্জু সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের টানাপোড়েন শুরু হয়। তিনি চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত।

মুইজ্জু ২০২৩ সালে তার নির্বাচনী প্রচারের সময় ভারতীয় বাহিনীকে উচ্ছেদ করার প্রতিশ্রুতি দেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তার ভারত-বিরোধী বক্তব্য আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ছোট এই দ্বীপ দেশটির অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত ও চীন দুই দেশই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মালদ্বীপকে চীন ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এখন চীন দ্বীপরাষ্ট্রটিতে সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানো, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে চায়।

অন্যদিকে, ভারত সরকার ঐতিহ্যগতভাবে ৫ লাখ লোকের বাসস্থান মালদ্বীপকে তার প্রভাবের মধ্যেই বিবেচনা করে। কারণ, মালদ্বীপ ভারতের ‘প্রতিবেশী সবার আগে নীতির’ বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে, ফলে সুবিধাও পেয়েছে অনেক।

একইসঙ্গে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের প্রধান সামুদ্রিক প্রতিবেশী হলো মালদ্বীপ। বিশ্বের পূর্ব-পশ্চিম শিপিং লেনগুলি মালদ্বীপের ১,১৯২টি ছোট প্রবাল দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করে।  এই জলপথ নিরক্ষীয় অঞ্চলজুড়ে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত।

ভারতের লাক্ষাদ্বীপের মিনিকয় দ্বীপ থেকে মাত্র ৭০ নটিক্যাল মাইল এবং মূল ভূখণ্ডের পশ্চিম উপকূল থেকে ৩০০ নটিক্যাল মাইল দূরে মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যিক সমুদ্র পথ বিবেচনা করলে, এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব অনেক।

ভারত মালদ্বীপে রাডার, হেলিকপ্টার, বিমান পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। যার কয়েকটি চিকিৎসা সেবার জন্যে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীও ভারত মহাসাগরের জলসীমায় টহল দেয়।

বর্তমানে মালদ্বীপে প্রায় ৮৮ জন ভারতীয় সেনা রয়েছেন। সমুদ্রে আটকা পড়া বা দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া লোকদেরকেও উদ্ধারে সহায়তা করে ভারতের সেনা সদস্যরা।

গত বছর ভারত থেকে ১১ শতাংশ পর্যটক মালদ্বীপে যায়। তবে মোহম্মদ মুইজ্জু বলেন, মহামারীর আগে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে এবং এই সংখ্যা তিনি দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নেবেন তিনি।

যাহোক, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোহাম্মদ মুইজ্জুর তিন জুনিয়র মন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটূক্তি করলে নয়াদিল্লি ও মালে’র মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি চীন সফর করেন।

দুই দেশের অবনতি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ে সরব ভারতের রাজনীতিবিদরাও। তাদের অনেকেই বলেছেন, ভারতের প্রতিবেশীদের ওপর প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন, যা তাদের জন্য ভালো নয়। ভারত ও মালদ্বীপের এই রসায়ন এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ দখল করেছে।

সর্বশেষ খবর