Homeআন্তর্জাতিকট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে শঙ্কায় কেন বিশ্ব!

ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে শঙ্কায় কেন বিশ্ব!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। এছাড়া রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপেও বেশ বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন ট্রাম্প।

গত বছরের নভেম্বরে ওয়াশিংটন সফরে যান এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাস। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই সঙ্গে ওই সফরে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হন কাজা ক্যালাস। মাসখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এইচআইএমএআরএস’ রকেট সিস্টেম কারখানা পরিদর্শন করেন এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গাস সাহকনা। তিনি এস্তোনিয়ার জাতীয় নিরাপত্তায় অবদান রাখায় সেখানকার কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

ওই সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা এই বার্তাটি শুধুমাত্র ওয়াশিংটনে নয়, আমেরিকান সমাজের সব পক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।’

চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর জনপ্রিয়তা নিয়ে জরিপ চালিয়ে আসছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি এবিসি নিউজের এক জরিপে উঠে এসেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনপ্রিয়তার দৌড়ে জো বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় করা এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ২ হাজার ২২৮ জন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) এ জরিপের ফল প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ।

জরিপের ফলে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান না অনেক ডেমোক্র্যাট। মাত্র ৫৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাট মনে করেন বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য।

এদিকে, ৭০ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক রিপাবলিকান ট্রাম্পকে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন।

গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইওয়া ককাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যদিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম ধাপ শুরু হয়। প্রথম ধাপে বেশ বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প।

আইওয়া ককাসে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে অনেক বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন ট্রাম্প। এ জয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে টানা তৃতীয় দফায় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। একই সঙ্গে ট্রাম্পের এ বিজয় রিপাবলিকান পার্টির ওপর তার অব্যাহত আধিপত্যকেই নির্দেশ করছে। জনপ্রিয়তায় বুঝি এতটুকুও ভাটা পড়েনি সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্টের।

ভয় আশা

যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক জোট ন্যাটো থেকে প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে ওয়াশিংটনের অনেক মিত্র বেশ উদ্বিগ্ন। ট্রাম্পের প্রচার-প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা একটি ওয়েবসাইটে তিনি বলেছেন, ‘ন্যাটোর যেসব উদ্দেশ্য ও অভিযান আমার প্রশাসনের আমলে হাতে নিয়েছিলাম, তা শেষ করতে হবে।’

ওয়েবসাইটে ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তিনি বা তার দলের লোকজনও এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে বক্তব্যটিকে ঘিরে ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে।

একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে কিছু নেতা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

বাল্টিক অঞ্চলের কজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। যে কারণে ২০২৪ সাল ইউরোপের জন্য টিপিং পয়েন্ট হতে পারে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনীতিকরাও বেশ উদ্বিগ্ন।

তবে গ্লোবাল সাউথের কিছু দেশ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের আবারও ফিরে আসাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ উপভোগ করেছেন। তার সরকার বাইডেনের চেয়ে আগের প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

বাণিজ্যে কতটা উদ্বেগ

ট্রাম্পের আগের মেয়াদে চীনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। তিনি আবার ক্ষমতায় আসলে দুদেশ আবারও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করতে পারে। এতে দুদেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও কমে যেতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা অ্যাগ্রিমেন্ট (ইউএসএমসিএ) নামক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটির ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়বে।

কানাডার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইউএসএমসিএকে একটি অস্তিত্বের সমস্যা হিসেবে দেখে। ২০২৬ সালে চুক্তিটি নিয়ে একটি যৌথ পর্যালোচনার কথা রয়েছে। তারপরও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পর্দার আড়ালে ট্রাম্পের কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন।

অন্যদিকে মেক্সিকান কর্মকর্তারা ট্রাম্প ও বাইডেন দুই শিবিরের সঙ্গেই সমানভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এছাড়া অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের কঠোর মনোভাবও দুদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা ঝুঁকি

ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এলে ইউরোপের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ।

ডিসেম্বরে সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক ওয়াশিংটনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে। ফিনল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬৪টি এফ-৩৫এ ফাইটার জেট কিনেছে এবং আর্টিলারি শেল উৎপাদন দ্বিগুণ করার জন্য বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মানি ছাড়াও ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে ইউরোপের আরও অনেক দেশের নেতারা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

সুযোগ

অনেক দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলেও কোনো কোনো রাষ্ট্র ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স। এছাড়া যুক্তরাজ্যও ট্রাম্পকে সম্ভাব্য ক্ষমতায় আসার বিষয়কে সুযোগ হিসেবে দেখছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটিকে রক্ষণশীলরা ইইউ ছাড়ার পুরস্কার হিসেবে দেখছে। বাইডেনের সময়ে এ চুক্তির আলোচনায় সামান্য অগ্রগতি হলেও ব্রেক্সিট সমর্থক ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে এ আলোচনা আরও গতি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প তার শাসনামলে সৌদি আরবের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক উপভোগ করেছেন। তার জামাতা জ্যারেড কুশনার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। গত বছরের শেষের দিকে জ্যারেড কুশনারের মালিকানাধীন আবুধাবি গ্লোবাল মার্কেটে একটি প্রাইভেট কোম্পানি স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখ রাখছে মস্কো। ক্রেমলিনের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা ভালো হবে বলেও ধারণা রয়েছে। যদিও ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ে মস্কোর অতি উৎসাহ পরে হতাশায় পরিণত হয়। এবার অবশ্য পুতিন প্রশাসন বেশ সতর্ক।

সর্বশেষ খবর